চাষ ব্যবস্থাপনা ও করণীয় ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  কলা পৃথিবীর সব দেশে উৎপাদন হয়। আর এর ফলও পাওয়া যায় সারা বছর। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয় এবং ওই জমি থেকে ফলের পরিমাণ প্রায় সাত লাখ টন, যা বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত ফলের প্রায় ৪২ শতাংশ।

দেশে ফল উৎপাদনের দিক থেকে বিবেচনা করলে কলার স্থান প্রথম কিন্তু উৎপাদনের জমির পরিমাণ বিবেচনা করলে এর স্থান দ্বিতীয়।

বিশ্বে ফল বাণিজ্যে কলার স্থান দ্বিতীয় (লেবু জাতীয় ফলের যেমন : কমলা, মাল্টা ইত্যাদির পরে কলার স্থান)। অন্যান্য দেশ কলা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। কিন্তু বাংলাদেশে কলা উৎপাদনের পরিমাণ, মান এবং প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার খুব খারাপ অবস্থার কারণে এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। শুধু দেশীয় চাহিদা মেটানোর জন্যই আমাদের কৃষকরা কলা উৎপাদন করেন। তবুও এই ফসলের বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখেন না। আপাতত কলার পানামা (Panama) রোগ সম্পর্কে ধারণা ও প্রতিকারে করণীয় উপায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো :

পানামা (Panama):
এই রোগ কলাচাষির জন্য মারাত্মক সমস্যা। কারণ এ রোগের কারণে কলার উৎপাদন শূন্যের কাছাকাছি আসতে পারে। এ রোগ (Esarium oxysporum cubense) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।

রোগের অনুকূল অবস্থা : (ক) আগের ফসলে রোগ থাকলে বা রোগাক্রান্ত গাছ থেকে চারা সংগহ্র করলে পরের বছর আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (খ) চারা রোপণের সময় বয়স কম হলে। (গ) নিম্নমানের নিষ্কাশিত মাটি হলে। (ঘ) অধিক আগাছা ও ঘাস হলে। (ঙ) আন্তঃপরিচর্যার অভাব হলে এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণ : (১) পুরনো পাতায় হলুদ বর্ণের দাগ দেখা যায়। (২) পুরনো পাতা ক্রমান্বয়ে সমস্ত অংশ হলুদ হয়ে যায়। পাতার কিনারা ফেটে যায় ও বোঁটা ফেটে যায়। লিফব্লেট ( পাতা) ঝুলে পড়ে ও শুকে যায়। (৩) দুই-তিন দিনের মধ্যে গাছের সব পাতা ঝুলে পড়ে (মধ্যের মাইজ বা হার্ট লিফ ছাড়া)। (৪) কলাগাছের গোড়া মাটির লেভেলের কাছকাছি লম্বালম্বি ফেটে যায়। (৫) আক্রান্ত গাছ থেকে অস্বাভাবিক থোড় বের হয়। (৬) আক্রান্ত গাছ ও রাইজোম উহার ভেতর কালচে বর্ণের দেখা যায়।

দমনব্যবস্থা : (১) রোগমুক্ত মাঠ থেকে সাকার সংগ্রহ করতে হবে। (২) মাঠ থেকে রোগাক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। (৩) রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে। (৪) রোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয় এমন ফসল, যেমন- বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স প্রভৃতির সাথে ফসল চাষ না করা। (৫) দুই-তিন বছর পর ফসল বদল করে শস্য পর্যায় অলম্বন করা। (৬) চুন প্রয়োগ করে মাটির পি-এইচ (PH) বৃদ্বি করা। (৭) ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করা। যেমন- ফুরাডন ৫ জি প্রতি গাছে ৫ গ্রাম হারে (১.৫ কেজি/ একর) প্রয়োগ করতে হবে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ