দিনাজপুর প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভার্মি কম্পোষ্ট সার/জৈব সার উৎপাদন করে আসমানী বেগম এখন সফলতাকে ছুঁতে যাচ্ছেন। স্বপ্ন তার জৈব সারের আলোয় নিজেকে আলোকিত করার।

জমিতে ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করে কৃষি খাতকে আরো সম্প্রসারিত ও নিজ পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে আলাপকালে এমনটাই প্রকাশ করলেন প্রান্তিক এ নারী কৃষক উদ্যোক্তা।

তার মতো জৈব সার উৎপাদনকারীদের সংখ্যাও এখন দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দরের বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কেঁচো ও গোবর দিয়ে উৎপাদিত জৈব সার জমিতে প্রয়োগে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকেরা। এ জৈব সার ব্যবহারে তাদের জমির উবর্রতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শাক-সবজি, ফল-মূলের ফলনও ভাল হচ্ছে।

গরুর গোবর আর কেঁচো থেকে জৈব ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করছেন আসমানী বেগম। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত এক বছর আগে সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন তিনি।

জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ও উপজেলা কৃষি অফিসের বাস্তবায়নে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি-২) এর আওতায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে সিআইজি প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন গ্রামে ১২০ টি সিআইজি কৃষক সমিতির মাধ্যমে প্রায় ২৫ টির মত ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী চলমান রয়েছে।

সমিতির সদস্যরা কেঁচো সার উৎপাদনের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদনে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের থাই কেঁচো দ্বারা পরিবেশ বান্ধব জৈব সার তৈরির সকল প্রকার উপকরণ বিনামূল্যে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের কিসমতপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামরে স্ত্রী আসমানী বেগম গত এক বছর আগে কেঁচো সংগ্রহ করে নিজের ফার্মের গরুর গোবর দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন শুরু করেন তিনি।

প্রথম দিকে অল্প পরিমাণ সার উৎপাদন হলেও তার কর্মকান্ড দেখে উপজেলার ফতেজংপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম তাকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতায় আসমানী বেগম নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোষ্টের প্রদর্শনী চালু করে।

বর্তমান এখান থেকে স্বল্প পরিসরে স্থানীয় কিছু সবজি চাষি ও নার্সারী মালিকরা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে জৈব সার নিয়ে যাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে ব্যবসার পরিধি আরো প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে।

আসমানী বেগমের জৈব সার উৎপাদন দেখে বেকার যুবকরা দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। কৃষি অফিস থেকে থাই কেঁচো থেকে শুরু করে প্রদর্শনীর জন্য সকল প্রকার উপকরণ ও সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

জৈব সার উৎপাদন এবং নিজের সবজি ক্ষেত থেকে শুরু করে ধান ক্ষেতে সার ব্যবহারসহ প্রদর্শনীতে উৎপাদনকৃত সার সমিতির কিছু সদস্যদের মাঝে বিতরণও করছেন আসমানী বেগম।

উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ফসলি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো ও কৃষকদেরকে পরিবেশ বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করতেই সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বর্তমানে জৈব সার উৎপাদনের বিষয়টি উপজেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় চাষিরা ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা কৃষকদের পরিবেশ বান্ধব জৈব সার ব্যবহারের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছি।