দেশের মাটিতে তিন বছরেই নারিকেলের ফুল আসলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিকেলের চারা রোপনের সাত থেকে আট বছর পর ফুল/কুড়ি আসার অপেক্ষার পালা শেষ। দেশের মাটিতে তিন বছরেই নারিকেলের ফুল আসলো। তিন বছরের মাথায় মিলবে নারিকেল বা ডাব। এবার বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল চাষের উন্মুক্ত হবার অপেক্ষা।

দেশের মাটিতে দোয়ার হাইব্রিডনামের ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল চাষের সফলতা মিলেছে। প্রায় ২৮ মাস আগে লাগানো কয়েকটি চারার গাছে নারিকেলের ফুল/কুড়ি দেখা দিয়েছে।

তিন বছর আগে চাষীদের হাতেভিয়েতনামের ওই খাটো জাতের নারিকেলে তুলে দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে নানা জল্পনা কল্পনা, শঙ্কা, আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নারিকেলের গাছে নতুন কুড়ি দেখা দেয়ায় এখন সব কিছু ছাপিয়ে সফলতার গল্প মুখে মুখে। শুরু হতে যাচ্ছে নারিকেল চাষের নতুন অধ্যায়।

গত ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ‘দোয়ার হাইব্রিড নারিকেল’চারা চাষিদের হাতে তুলে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। মূল কাজটি সম্পাদন হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অদিধফতরের হর্টিকালচারাল উইংয়ের অধীনে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে।

এ প্রকল্প পরিচালক ও কৃষিবিদ মেহেদী মাসুদ বলেন, কৃষি বিজ্ঞানী, চাষি থেকে শুরু করে সবার মনে প্রশ্ন ও কৌতুহল ছিলো দেশের মাটিতে এটি সম্ভব কিনা। কিন্তু আশার কথা হলো সত্যিই সম্ভব হয়েছে, ২৮ মাসের মাথাতেই ফুল/কুড়ি এসেছে। আমরা বলেছি তিন বছরের মধ্য গাছে নারিকেল পাওয়া যাবে।

সুতারাং এখানে আর কোনো শঙ্কা নেই। আমাদের দেশেও ভিয়েতনামের নামে মতো ছোট ছোট গাছে ডাব বা নারিকেল ঝুলতে দেখা যাবে। এর মধ্য দিয়ে তৈরি হলো অপার সম্ভাবনা। এটিকে এখন কাজে লাগাতে হবে।

তিনি জানান, এই জাতের নারিকেলের অনেক গুণ রয়েছে। এই নারিকেল থেকেই চারা তৈরি করা যাবে। দেশের উপকূল অঞ্চলসহ সব জায়গাতেই চাষ করা যাবে এই জাতের নারিকেল। বাড়ির আঙ্গিনাসহ যে কোনো জায়গাতেই চাষ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমাতায়নও হবে। একটি বাড়িতে যদি ৫ থেকে ১০টি নারিকেল গাছ থাকে তাহলে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার ডাব বিক্রি করা সম্ভব। এতে বছর ব্যাপী আয়ের উৎসও তৈরি হবে।

প্রকল্পটির হর্টিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার মো. আবদুল হালিম জানান, সাভারের রাজা লাখ হর্টিকালচারাল সেন্টারে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল গাছে ফুল বা কুড়ি দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি গাছে ফুল দেখতে পাওয়া গেছে। তবে আমরা আশা করছি আর কিছুদিন পর বিভিন্ন এলাকায় এই কুড়ি বা ফুল দেখা যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত চার লাখ খাটো জাতের নারিকেলের চারা আমদানি ও বিতরণ করা হয়েছে। যেসব জায়গায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সেসব জায়গায় বিনামূল্যে চাষিদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে চারা। এছাড়া প্রতিটি চারা কিনে নিতে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই হাইব্রিড নারিকেলের দশ হাজার চারাভারতের কেরালা প্রদেশ থেকে নিয়েআসা হয়।

চাষীদের চারা রোপনের শুরু থেকে গাছে ফল আসা পর্যন্ত যত্ন ওপরিচর্যা বিষয়ে লিফলেট দেয়াহচ্ছে। এছাড়া যে কোনো সমস্যা হলে কৃষি হর্টিকালচার অফিসে যোগাযোগ করলে মিলছে সমাধান। তবে অতীতে দেশে বেসরকারিভাবে অনেকেই ওই নারিকেলের চাষ করছেন। সেখানেও সফলতা দেখা গেছে।

দোয়ার নারিকেল: তিন বছরের মাথায় নারিকেলের গাছের উচ্চতা হবে দুই থেকে আড়াই ফুট। বছরে তিন থেকে চার বার আসবে ফুল। প্রতিবার নারিকেল ধরবে দুই থেকে আড়াই’শটি। একটি গাছ বাঁচবে ২০ থেকে ২৫ বছর। ভারতের কেরালা রাজ্যে এ উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড নারিকেলের চাষ দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে। দেশের মাটিতে তিন বছরেই নারিকেলের ফুল আসলো এটি কৃষির জন্যে খুবই ভালো সংবাদ।