আন্তর্জাতিক নিলামে দেশের চায়ের

এগ্রিকেয়ার২৪.কম ডেস্ক: আন্তর্জাতিক নিলামে দেশের চায়ের দামে তেজিভাব বিরাজ করছে। চায়ের ২০১৮-১৯ নিলাম মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার আগের মৌসুমের প্রথম নিলামের তুলনায় কেজিপ্রতি ১৮ টাকা বেশি উঠেছে। চট্টগ্রাম নিলামকেন্দ্রের এ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম উঠেছে ২২২ টাকায়, যা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো মানের চা সরবরাহ বেশি থাকায় মৌসুমের প্রথম আন্তর্জাতিক নিলামে চায়ের দামে তেজিভাব দেখা গেছে। একই সঙ্গে ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদার জের ধরে নিলামে সরবরাহ করা ৯০ শতাংশ চা বিক্রি হয়েছে।

টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিটিএবি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমের প্রথম আন্তর্জাতিক নিলামে ২৪ হাজার ৮৪৩ প্যাকেটে মোট ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৫ কেজি চা সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২১ হাজার ৫৭ প্যাকেট দানাদার ও ৩ হাজার ৭৮৬ প্যাকেট গুঁড়ো চা।

তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিলামে ২৪ হাজার ৮২৩ প্যাকেটে সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৫ কেজি চা বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। নিলামে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয় গড়ে ২২২ টাকায়। এর মধ্যে প্রতি কেজি দানাদার চা বিক্রি হয়েছে গড়ে ২১৭ টাকায়।

আর গুঁড়ো চায়ের গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২২৭ টাকা। আগের মৌসুমের প্রথম আন্তর্জাতিক নিলামে ২৪ হাজার ৯৭ প্যাকেটে দানাদার ও গুঁড়ো মিলিয়ে মোট ১৩ লাখ ২২ হাজার ৩৫৬ কেজি চা বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়েছিল।

ওই নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২০৪ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে চলতি মৌসুমের প্রথম নিলামে পানীয় পণ্যটির গড় দাম কেজিপ্রতি ১৮ টাকা বেড়েছে।

আগের মৌসুমের প্রথম আন্তর্জাতিক নিলামে সরবরাহ করা চায়ের ৮০ শতাংশ কিনে নিয়েছিলেন ক্রেতারা। সর্বশেষ নিলামে সরবরাহ করা চায়ের ৯০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে টিটিএবি। এক মাস ধরে সিলেট, মৌলভীবাজারসহ দেশের চা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদিত চায়ের মান বেড়েছে। এ কারণে মৌসুমের প্রথম নিলামে ভালোমানের চা সরবরাহ হয়েছে। মূলত এ কারণেই সর্বশেষ নিলামে সরবরাহ করা চায়ের ৯০ শতাংশ বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্রোকার্সের সিনিয়র ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ ২০১৮-১৯ মৌসুমের প্রথম নিলামে চায়ের গড় দামে তেজিভাবের পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেন। প্রথমত, মৌসুমের প্রথম নিলামে ক্রেতাদের মধ্যে চা কেনার ব্যাপারে আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।

দেড় মাস কোনো নিলাম অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুদামে চায়ের মজুদও কমতির দিকে ছিল। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বেশি বেশি চা কিনেছে। দ্বিতীয়ত. নতুন মৌসুমের প্রথম নিলামে চায়ের সরবরাহ বেশি ছিল।

একই সঙ্গে সরবরাহ করা চায়ের গুণগত মান ছিল বেশ ভালো। মূলত এসব কারণে সরবরাহ বেশি থাকা সত্ত্বেও মৌসুমের প্রথম নিলামে চায়ের দামে তেজিভাব দেখা গেছে। বাড়তি সরবরাহের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো গেলে মৌসুমের পরবর্তী নিলামগুলোতেও চায়ের দামে তেজিভাব বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে আগামী ১৫ মে থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক নিলাম কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর টিটিএবির তত্ত্বাবধানে এখানে ১৫ মে, ১৬ জুন ও ১৭ জুলাই তিনটি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

এ সময় চট্টগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে পূর্বনির্ধারিত নিলামগুলো বন্ধ রাখা হবে। পরীক্ষামূলক নিলামের পর পর্যালোচনা শেষে দেশের দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রের পরবর্তী কার্যক্রমবিষয়ক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন টিটিএবির সহসভাপতি মো. ইউনুস।

তিনি জানান, ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর দেশের দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের পর চা বোর্ডের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারে পাঁচটি ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।

শ্রীমঙ্গলে চা বিক্রির জন্য অনুমোদিত ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, জালালাবাদ টি ব্রোকার্স, এসটি ব্রোকার্স লিমিটেড, এসটিএলটি ব্রোকার্স লিমিটেড, গ্রেটার সিলেট টি ব্রোকার্স লিমিটেড ও শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স লিমিটেড।