আবু খালিদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রি শিল্পে রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব অনেক দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এরসঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন রোগবালাই। ফলে উৎপাদন কমছে বাড়ছে খরচ।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাণিস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে একাধিক রোগের প্রাদুর্ভাব দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে ‍যুক্ত হয়েছে নতুন রোগ বালাই।

গবেষকরা বলছেন, মূলত সঠিক নিয়ম না মেনে খামার তৈরি ও পরিচালনায় রোগ বালাই ব্যাপক হারে বিস্তৃতি হচ্ছে। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রার কারণেও কিছু রোগ দেখা দিচ্ছে। তবে এসব রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে তেমন কোন বড় পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়া হয় নি।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাণিস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. গিয়াস উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গত দশবছরে পোল্ট্রিতে বেশ কিছু নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এরপাশপাশি পুরাতন রোগের প্রাদুর্ভাব দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে।

এ গবেষক জানান, আইবি (ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস), আইএলটি (ইনফেকশাস ল্যারিংগোট্রাকিয়াইটিস), সালমোনেলোসিস, মাইক্রোপ্লাজমা রোগের প্রাদুর্ভাব খুবই কম ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি এসব রোগের প্রাদুভার্ব অনেক বেড়েছে।

৫ বছর আগে যদি বলি এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বছরে দুই থেকে তিনবার দেখা দিয়েছে। কিন্তু এখন তা বেড়ে গিয়ে ৬ থেকে ৮ বার দেখা যাচ্ছে।

কিছু রোগের গতিবিধিও ঠিক করা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন ড. গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, অতিসম্প্রতি রাণীক্ষেত রোগটি অন্য রকম আকারে ধারণ করেছে। আমরা মনে করেছিলাম রোগটি ভ্যাকসিন দিলে নিয়ন্ত্রণের আসবে, কিন্তু তা হচ্ছে না।

গবেষকরা বলছেন, পোল্ট্রির এসব রোগ বালাই দমনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। না হলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, রোগ বালাইয়ে মনিটরিংটা খুব জোরদার করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে যেসব পোল্ট্রি পণ্য আসছে সেগুলো কড়া পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ক্ষতির শঙ্কা থাকলে এয়ারপোর্ট ও বন্দরগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। গবেষণাও বৃদ্ধি করতে হবে।

রোগবালাই বৃদ্ধির ফলে প্রথম দিকে পোল্ট্রি শিল্প থেকে যে ধরণের রিটার্ন পাওয়া যেত তার চেয়ে এখন অনেক কম রিটার্ন মিলছে, যোগ করেন তিনি।

রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণ কী এ প্রশ্নের উত্তরে ড. গিয়াস উদ্দিন বলেন, পোল্ট্রি শিল্প যেভাবে বেড়ে উঠেছে সেভাবে বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি।

শুরু থেকেই সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। ভ্যাকসিনকে কম গুরুত্ব দিয়েছি। রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটার দিকে আমরা একেবারেই যাই নাই। গুড প্র্যাক্টিসটা দরকার ছিলো।

এছাড়া নিয়মমাফিক যে খামারগুলো তৈরি করার কথা সেভাবে আমরা করতে পারি নি। এর রেশ এখন টানতে হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই এর নেতিবাচক প্রভাব পরছে শিল্পটির ওপর।

তিনি জানান, বায়োসিকিউটির তিনটা ধাপের কথা বলছি আমরা। প্রথমটা হলো, যে খামার করছে সে বায়োসিকিউরিটি বুঝে কিনা। যেখানে খামার করা হবে সেই জায়গাটা বায়োসিকিউরিটির আওতায় পরে কিনা এবং তৃতীয় হলো প্রায়োগিক দিক।

ড. গিয়াস উদ্দিন মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার আলোকে বলেন, কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় খামারের ঘণত্বের কারণে সব সময়ই রোগ বালাই লেগে আছে। পোল্ট্রির রোগ বালাইয়ের অন্যতম বড় উৎস এলাকার নাম হলো গাজীপুর।

বার্ড ফ্লু রোগটিও প্রথম ধরা পরে গাজীপুরে। এখনো নতুন নতুন রোগের উৎসস্থল গাজীপুর। এছাড়াও নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতে অপরিকল্পিত খামার গড়ে তোলার কারণেই এর কুফল এখন পেতে হচ্ছে। দশবছর আগে ২০০৭ প্রথম দেখা পাওয়া বার্ডফ্লু ২০১৩ সাল পর্যন্ত মারাত্মক আকারে ছিলো। এখনও কিন্তু রোগটি আছে। যা ছোট খামারির জন্যে ভয়ানক।

কোন মুরগিতে কী রোগ হচ্ছে এমন প্রসঙ্গে টেনে গবেষক ড. গিয়াস উদ্দিন জানান, বাণিজ্যিক ব্রয়লারে রাণীক্ষেত রোগটি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময়ে গাম্বুরাও পাওয়া যায়। ব্রয়লারে তিন থেকে চারটা রোগের আক্রমণ হলেও লেয়ারে আক্রমণ হয় প্রায় দশ ধরণের রোগবালাই।

এসব রোগ বালাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা কী এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. গিয়াস উদ্দিন জানান, গুড ফার্ম ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। এরমধ্যে বায়োসিকিউরিটিসহ সব কিছু থাকবে। এটি না থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তৃণমূলের খামারিরা।

কোয়ালিটি ভ্যাকসিন ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভ্যাকসিন আমদানিতে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বরং ভ্যাকসিন উৎপাদনে নজর দেয়া উচিত, যোগ করেন এ গবেষক।