আবু খালিদ, সিনিয়র রিপোর্টার, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জলবায়ুর পরিবর্তনে নতুন নতুন সঙ্কট ও সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে বাংলাদেশ। ক্রমেই এসব সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পরতে শুরু করেছে বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ ১০ দেশের একটি বাংলাদেশে।

যেসব নতুন সঙ্কট ও সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে তার মধ্য অন্যতম হলো বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়ের ধরণ পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্টের পানির উচ্চতা ও কৃষি জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আগাম বন্যা, খরা, বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব।



দীর্ঘদিন ধরে জলাবায়ু পরিবর্তনের ওপর গবেষণা ও কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে এমন মন্তব্য করেছেন বিশেজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে বেশ সঙ্কটে পরতে পারে দেশটি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা বিভাগের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. সাইফুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাব বেড়েছে।

আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডিজাস্টার সায়েন্স এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এর সহকারী প্রফেসর ও চেয়ারম্যান মো. শাখাওয়াত হোসাইন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বেশ কিছু বিষয়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। যেমন শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে আবার তার বিপরীত সময়ে বৃষ্টিপাত হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সমুদ্রপৃষ্টের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ গবেষক বলেন, এসব বিষয় কিন্তু আমাদের দেশের জন্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

আগাম বন্যা, খরার স্থায়ীত্বকাল, লবণাক্তা ও ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক এসব দূর্যোগের প্রভাবে আমাদের দেশে কৃষিতে বড় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এসব মোকাবেলায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্তি মিলবে এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বব্যাপী পরছে।

আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণও কিন্তু শুধু বাংলাদেশ নয়। তাই বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। অনেক অর্থও দরকার। যেসব দেশ এসবের জন্যে মূল দায়ী তাদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের (বাংলাদেশ) গ্রীণ টেকনোলজিকে প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন, সোলার, ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহারে সহযোগিতা ও ভূর্তিকি ও কর ছাড় দিতে হবে। প্রয়োজনে উন্নত দেশের সহযোগিতা পেতে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, Bangladesh Climate Smart Agriculture(CSA) Country Profile & Kick-off Bangladesh Climate Smart Investment plan (CSIP)’ এর অনুষ্ঠানে বলা হয়, বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকিসূচক অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০টি জলবায়ু-ঝুকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের জলবায়ুর পরিবর্তনরোধ এবং পরিবর্তনের মধ্যেও ব্যাপক উন্নয়ন-পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে বড় ধরণের ক্ষতিতে পরবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে প্রতিবছরই বাড়ছে লবণাক্ত জমির পরিমাণ, অশনি সংকেত কৃষিতে