সময় এখন স্মার্ট খামারীর: ডেইরীতে নাইট্রোজেন ক্যান ও স্পার্ম মোটিলিটি টেস্টের ব্যবহার শিরোনামের লেখাটি লিখেছেন খালিদ এইচ সরকার রবিন, (খামার মালিক ও সুপেরিয়া এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চেয়ারম্যান):

ঘটনা ১: ২০১৬ সালের শেষদিকে একজন খামারী ভাই এসিআই নারায়ণগঞ্জের ডিপো হতে সিমেক্সের ৬০ টি হলস্টিন সিমেন সংগ্রহ করেন। প্রায় ৩০ টি সিমেন বিভিন্ন গাভীতে ব্যবহারের পরেও মাত্র একটি গাভী কনসীভ করে।

হতাশ হয়ে তিনি বাকী সিমেনগুলো এ. আই. কর্মীকে দিয়ে দেন। অথচ সিমেন সংগ্রহের পর তিনি সময়মত নাইট্রোজেন গ্যাস রিফিল করেছেন এবং নিয়ম মেনেই সিমেনগুলো ব্যবহার করেছেন।

পর্যবেক্ষণ: এতগুলো গাভীতে কনসেপশন না হওয়ার একটিই কারন থাকতে পারে- সিমেনগুলো বেশিরভাগ মরা ও আধমরা ছিল। উনি হয়তো নিয়ম মেনেছেন, কিন্তু সিমেনগুলো উনার কাছে আসার আগেই মরা ছিল।

সিমেন ও ভ্যাক্সিনে কুল চেইন মেনটেইন করা অত্যাবশ্যক। সিমেনের ট্যাংকে যদি নাইট্রোজেন শেষ হয়ে যায় তবে পরে রিফিল করলেও সিমেনগুলো মরে যায়। এক মুহূর্তের জন্যও নাইট্রোজেন শেষ হয়ে গেলে চলবে না।

(ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য- কিছুক্ষনের জন্যও তাপমাত্রা যদি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যায় তবে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। গরম হয়ে যাওয়া ভ্যাক্সিন পরবর্তীতে ফ্রিজে ঢুকালেও লাভ হয় না।)

ঘটনা-২: কয়েকদিন আগে একজন খামারী ভাই জানালেন তিনি ২ লিটারের নাইট্রোজেন ক্যান কিনেছেন এবং প্রায় ২৫ টি সিমেক্সের হলস্টিন ও বেশকিছু দেশীয় ১০০% শাহীওয়াল সিমেন সংগ্রহ করেছেন। এখন গ্যাস কমে যাওয়ার কারনে তিনি ক্যানটি Linde Bangladesh তেজগাঁও এ জমা দিয়েছেন গ্যাস ভরার জন্য।

Linde Bangladesh কয়েকদিন পরে লিকুইড নাইট্রোজেন ভরে তা তাকে ফেরত দিবে। উনার কথাগুলো শুনে ওনাকে ২ টি পরামর্শ দিলামঃ

পরামর্শ ১: স্পার্ম মোটিলিটি টেস্ট: ২ লিটারের ট্যাংক সিমেন স্টোরেজের জন্য উপযোগী নয়- কারন প্রতি ৭ দিনেই এটি রিফিল করতে হয়। তাই তিনি যে কয়েকদিনের জন্য Linde Bangladesh-এ ক্যানটি রেখেছেন- যদি লিকুইড নাইট্রোজেন রিফিলের আগেই গ্যাস শেষ হয়ে গিয়ে থাকে তবে তো সিমেনগুলো মরে যাবে।

তাই তিনি যেন ক্যান হাতে পেয়ে অন্তত একটি স্ট্র “স্পার্ম মোটিলিটি টেস্ট” করান। যেহেতু একইসাথে ছিল- তাই একটি টেস্ট করলেই বাকীগুলো ভাল আছে কিনা বোঝা যাবে। স্পার্ম মোটিলিটি টেস্ট হল সিমেনের মধ্যে স্পার্ম বা শুক্রাণুগুলো জীবিত আছে কিনা তার পরীক্ষা।

এই পরীক্ষা মাইক্রোস্কোপ যেখানে আছে সেখানেই করা সম্ভব। দরকার কেবল মাইক্রোস্কোপ, স্লাইড ও কাভার স্লীপ। সিমেন থয়িং করে (অর্থাৎ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এনে) কয়েকফোটা স্লাইডে রেখে কাভার স্লীপ দিয়ে ঢেকে মাইক্রোস্কোপে রাখলেই হাজার হাজার শুক্রানুর নড়াচড়া দেখা যায়। মরা সিমেন ব্যবহার করলে গাভী কনসীভ করবে না- ধরা পড়তে পড়তে অনেকমাস সময় নষ্ট হয়ে যাবে।

পরামর্শ ২: স্টোরেজের জন্য ১০/১৩ লিটার ক্যান প্রয়োজন। তাহলে ২ মাস পরপর রিফিল করলেই চলে।

উনি Linde Bangladesh থেকে ২ লিটারের ক্যানটি ফেরত পাওয়ার পর সেটি এসিআই ল্যাব এ (বাড়ি নং-১৮/বি, রোড নং-১২৬, গুলশান ১, ঢাকা। নিয়ে যান এবং মোটিলিটি টেস্ট করান। মাত্র ২০০ টাকা খরচ হয়।

তার সিমেন স্ট্রগুলো ভাল আছে এবং তিনি নিশ্চিন্তে এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। অনিশ্চয়তা কেটে গেল। এই মোটিলিটি টেস্ট পাড়া-মহল্লার ডায়াগনস্টিক ল্যাব, এমনকি হাইস্কুল- কলেজের জীববিজ্ঞান ল্যাবরেটরীর এক চোখের মাইক্রোস্কোপেও করা যায়- খুবই সহজ।

সময় এখন স্মার্ট হওয়ার। মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। সবাই করে না- তাই আমিও করব না- এরূপ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের ডেইরী সেক্টরটি এখনও প্রিমিটিভ (আদিম) অবস্থায় আছে।

একে এগিয়ে নিতে হলে খালি সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না। আমাদেরও অনেক কিছু করার আছে। If now is not the right time, then the right time may never come. যেটা কেউ করে না- আপনি সেটাই করে দেখান- একসময় সবাই আপনার দেখানো পথে হাঁটবে।

ভাল সিমেন, নাইট্রোজেন ট্যাংক, মোটিলিটি টেস্ট, বোভাইন জেনেটিক্স, ট্রপিক্যাল ক্রসব্রীডিং- এগুলো নিয়ে ভাবুন, নিজেকে যুগপোযোগী করে তুলুন। সময় এখন স্মার্ট খামারীর: ডেইরীতে নাইট্রোজেন ক্যান ও স্পার্ম মোটিলিটি টেস্টের ব্যবহার লেখাটি বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে আমাদের লিখে পাঠাতে পারেন।