আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সয়াবিন উৎপাদনে সার সঙ্কটে পড়েছে ব্রাজিল। যদিও চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে সয়াবিন আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল দেশটির। তেলবীজটি আবাদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত সারের সরবরাহ না থাকায় কমছে সয়াবিন আবাদ। এ প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। এমনটিই বলছে- মার্কিন কৃষি বিভাগ।

সম্প্রতি মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়, এক বছরের ব্যবধানে আবাদ বাড়বে মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধির হার গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ নিচে অবস্থান করবে।

তথ্য বলছে, ২০২১-২২ মৌসুমে ব্রাজিলে অন্তত ৪ কোটি ৭ লাখ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ করা হয়েছিল। তবে ২০২২-২৩ মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে ৪ কোটি ২৫ লাখ হেক্টরে পৌঁছবে বলে মনে করছে ইউএসডিএ।

পড়তে পারেন: লিটারে ৮ টাকা কমলো সয়াবিন তেলের দাম

উৎপাদন গত বছরের ধস কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সয়াবিনচাষীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সারের ঊর্ধ্বমুখী ব্যয় ও প্রাপ্যতা। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে সারের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।

ইউএসডিএ বলছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে ব্রাজিলে সয়াবিনের প্রাক্কলিত উৎপাদনের পরিমাণ ১৪ কোটি ১০ লাখ টন। এ সময় প্রতি হেক্টরে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার টন করে উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উৎপাদন আরো বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু সারের ব্যবহার কমলে তা সম্ভব হবে না।

সয়াবিন উৎপাদনে সারসহ যেসব উপকরণ ব্যবহার হয়, সেসবের পুরোটাই আমদানি করে ব্রাজিল। দেশটিতে যে পরিমাণ সার সরবরাহ হয় তার ৪০ শতাংশই ব্যবহার হয় সয়াবিন উৎপাদনে। এর মধ্যে আবার ৮৫ শতাংশই আমদানীকৃত।

পড়তে পারেন: বাংলাদেশে সয়াবিন চাষ পদ্ধতি -পর্ব ২

বেশ কয়েক মাস ধরে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশটিতে সারের সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় উৎপাদন শিল্পকে রক্ষা প্রকল্প ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সরবরাহের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে হামলা চালালে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে। সারের সরবরাহ চেইনে সংকটের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ সার সরবরাহকারী দেশ। অন্যদিকে ব্রাজিল দেশীয় চাহিদার এক-চতুর্থাংশ সারই রাশিয়া থেকে আমদানি করে।

তথ্য বলছে, মধ্য ব্রাজিলের পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা প্রায় ১৫ শতাংশ সারের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। এতে উৎপাদন কমেছে মাত্র ৫ শতাংশ। অর্থাৎ সারের কম ব্যবহার সত্ত্বেও অনুকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন স্বাভাবিক।

ইউএসডিএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টন সয়াবিন প্রক্রিয়া করা হবে। প্রক্রিয়াকরণের হার বাড়বে ২ শতাংশ।

এদিকে ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন সয়াবিন মিল উৎপাদনের প্রাক্কলন করেছে ইউএসডিএ। ২০২১-২২ মৌসুমে সয়াবিন মিল উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টন। স্থানীয় বাজারে চলতি ও আগামী মৌসুমে পণ্যটির ব্যবহার ১ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

পড়তে পারেন: কোন তেল ব্যবহার করবেন-সয়াবিন নাকি সরিষা?

সয়াবিন তেল উৎপাদন ৯৮ লাখ টনে পৌঁছার পূর্বাভাস মিলেছে। স্থানীয় বাজারে এ তেলের ব্যবহার বেড়ে ৮১ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমের তুলনায় ব্যবহার ১০ লাখ টন বাড়বে।

২০২২-২৩ মৌসুমে ব্রাজিল ৮ কোটি ৭০ লাখ টন সয়াবিন রফতানি করতে সক্ষম হবে। চলতি মৌসুমের তুলনায় রফতানি এক কোটি টন বাড়তে পারে। মূলত বিদ্যমান সরবরাহ ও আকর্ষণীয় বৈদেশিক মুদ্রার দামের ওপর ভিত্তি করে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ