আনারস

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পাহাড়ি এলাকায় এবার আগাম হানিকুইন জাতের আনারসে কৃষকের মুখে হাসি ফুঁটেছে। আগাম হানিকুইন আনারসে খরচের দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারছেন তারা। অধিক লাভবান হওয়ায় এ জাতের আনারস চাষে ঝুঁকছেন ওই এলাকার কৃষকেরা।

উৎপাদন খরচ ও বিক্রির বিষয়ে কৃষকেরা জানান, বর্তমানে একেকটি আনারস উৎপাদনে তাদের প্রায় ৫ থেকে ৭ টাকা পর্ন্তন্ত খরচ হয়। আকারভেদে প্রতিটি আনারস ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর বড় প্রতিটি আনারস বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এ হিসাবে আনারসের উৎপাদনের খরচের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারছেন পাহাড়ের কৃষকেরা।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) প্রকাশিত সংবাদে এসব তথ্য বলা হয়েছে। মনসুর আহম্মেদ এর প্রতিবেদনে পুরো চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচরের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় হানিকুইন জাতের আনারসের আগাম ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার হানিকুইন জাতের আনারসের ফলন ভালো হওয়াতে ও আগাম ফলনে অনেকটা লাভবান হবে বলে আশা এখানকার কৃষকদের।

জ্যৈষ্ঠ মাস আনারসের মাস হলেও বর্তমানে জেলার নানিয়ারচরে কৃষি বিভাগের পরামর্শমতে বিশেষ পদ্ধতিতে হরমোন ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতি বছরই উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল আগাম আনারস হানিকুইন। দেশের সব জায়গাতে এ হানিকুইন জাতের এ আনারসের ফলন পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন: দেশে তিন লাখ রপ্তানিযোগ্য আনারসের চাষ শুরু

রাঙ্গামাটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে আনারসের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত নানিয়ারচর উপজেলা। নানিয়ারচর উপজেলার মধ্যে বেশীরভাগ মানুষই তাদের পরিত্যক্ত বাগানগুলোতে আনারসের চাষ করে থাকেন। আনারসের চাষ করে এখানে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নানিয়ারচর এলাকার মানুষ।

উপজেলার বুড়িঘাটের আনারস চাষি মো: আনোয়ার হোসেন ও ধনকুলো চাকমা জানান, আনারস চাষে অভিজ্ঞতা না থাকলে আনারস চাষ করা সম্ভব নয়। ভালো ফলনের জন্য অক্টোবর মাসের আগেই আনারস চাষের জন্য পাহাড়ের জমি প্রস্তুত করতে হয়।

চাষ বিষয়ে কৃষকেরা জানান, আনারসের চারা তুলে তা প্রস্তুত রেখে  প্রায় ১ মাসের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায় জমি ঠিকঠাক করে আনারস চাষের উপযোগী করে তুলতে। তারপরে সারি সারি করে পাহাড়ের বুকে লাইন ধরে রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের পর আনারস বাগানের সেবা পরিচর্ষা ও আগাম ফলনের জন্য কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে হরমোন ব্যবহার করতে হয়।

তাতেই হানিকুইন জাতের আনারসের আগাম ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে স্বাভাবিকভাবে বাগানে আনারস আসতে আরেকটু সময় দরকার হয়। বর্তমানে পাহাড়ে উৎপাদিত হাইব্রিড আনারস বছরে ২ বার ফলন আসে তাতে শীত মৌসুমের আগেই আনারস বাজারে দেখা যায়।

নানিয়ারচরের আনারস চাষি নুরুল ইসলাম জানান, তিনি নিজে হানিকুইন জাতের আনারসের বাগান করার পাশাপাশি নিজেও আনারস পাইকারি ও খুচরায় বিক্রি করি। সরেমজিনে দেখা যায়, নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট, ইসলামপুর, বগাছড়ি, ঘিলাছড়ি ও ১৭/১৮ মাইল এলাকা জুড়ে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আনারস বাগান।

সার্বিক বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, এবার নানিয়ারচর উপজেলায় ১২১০ হেক্টর জমিতে আগাম ফলনশীল আনারস হানিকুইনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফলন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। উপজেলার ইসলামপুর, বুড়িঘাট, সাবেকক্ষন, ঘিলাছড়ির প্রায় জমিতে আনারসের আবাদ করা হয়েছে এবং উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় হানিকুইন জাতের আনারসের আগাম ফলন ভালো হয়েছে।

তপন কুমার পাল বলেন, কৃষক নিজ নিজ মালিকানাধীন জমিসহ অন্যদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়েও এসব আনারসের চাষ করে থাকেন। এসব আনারস বাগানে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী নানিয়ারচর কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ওষুধের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। আগাম হানিকুইন আনারসে খরচের দ্বিগুণ দামে বিক্রি শিরোনামে সংবাদটির তথ্য বাসস থেকে নেয়া হয়েছে।