কেউ ফিরলেন পণ্য কিনে, কেউ আবার খালি হাতে
কেউ ফিরলেন পণ্য কিনে, কেউ আবার খালি হাতে

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে ডিম, আলু, পেঁয়াজসহ তিনটি সবজি। তা কিনতে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন। আজ বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার কাঁচাবাজার এলাকায়অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সংসার চালাতে টানাটানিতে পড়েছেন।

বাজারে ডিম, মাংস, সবজি—সবকিছুর দাম বাড়তি। সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি মূল্যে ডিম, পেঁয়াজ ও সবজি বিক্রির খবর পেয়ে আজ বুধবার দুপুরে নগরের চকবাজার এলাকায় ছুটে এসেছেন তিনি। তবে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পণ্য কিনতে পারেননি তিনি।

এদিন বিকেল চারটার দিকে চকবাজার ধনীরপুর এলাকায় কৃষিপণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে কথা হয় মোহাম্মদ কামালের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের দিকে খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে লাইনে দাঁড়ান। তবে পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি পণ্য কিনতে পারেননি। পরে আবার আসবেন জানিয়েছেন তিনি। তিনি ছাড়াও এদিন আরও অন্তত ৩০ জন এ সময় পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন চকবাজার এলাকা থেকে।

একই স্থান থেকে খালি হাতে ফিরে গেছেন শিক্ষার্থী আবদুল হামিদ, গৃহিণী লাকি শীল ও মেহেরা খাতুন। তাঁরা প্রত্যেকেই এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করেছেন পণ্যের জন্য। তাঁরা বলেন, আগের দিন পণ্য বিক্রির খবর পেয়ে এদিন লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে পণ্য পাননি অপেক্ষার পর। পরবর্তী সময় আবার আসবে। তবে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ার মানুষের চাহিদা আছে। তাই বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার।

ঢাকার পর গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরে খোলা বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি (ওএমএস) শুরু করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এ দিন সকাল ৯টা থেকে নগরের চকবাজার, দেওয়ানহাট, ষোলশহর, ফিরিঙ্গিবাজার ও ফিরোজশাহ এলাকায় ওএমএস কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। ৪৯০ টাকার মধ্যে প্রতিজন ১৩০ টাকা দরে ১ ডজন ডিম, ৭০ টাকা দরে ২ কেজি পেঁয়াজ, ৩০ টাকা দরে ৪ কেজি আলু, ২০ টাকা দরে ১ কেজি পেঁপে, ৪০ টাকায় একটি লাউ ও ৪০ টাকা দরে ১ কেজি করলা কিনতে পারবেন।

আরো পড়ুন: ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে দেশে এসেছে নেদারল্যান্ডস ও মিশরের পেঁয়াজ

প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি ট্রাক ২০০ জন ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি শুরু করে। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাহিদা আরও বেশি। আজ এই পাঁচ স্থানের তদারকি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি স্থানেই অন্তত ৫০ থেকে ৭০ জন ফিরে যাচ্ছেন পণ্য না পেয়ে। যেহেতু বরাদ্দ নেই, তাই সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি স্থানেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাই অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য।

আজ সকালে আগের দিনের একই স্থানেই পণ্য বিক্রি করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু কথা থাকলেও সেটি শুরু হয়েছে বেলা ১১টার দিকে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দিন বিক্রয়ের স্থানেই পণ্য ওজন করে প্যাকেট করা হয়েছে। ফলে বিক্রয় কার্যক্রমে সময় লেগেছে বেশি। পণ্য কেনার আগে নাম, মুঠোফোন নম্বর ও স্বাক্ষর করে টাকা জমা দিতে হচ্ছে।

সকাল ১০টায় নগরের চকবাজার এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, পণ্যের জন্য আগের স্থানে তেমন ভিড় নেই। কয়েকজন আশপাশে জিজ্ঞাসা করছেন পণ্য দেওয়ার বিষয়ে, তবে ১১টার দিকে ট্রাক আসতেই পরিস্থিতি পাল্টে গেল। ট্রাকের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন। আশপাশের দোকানগুলো থেকে বাজারের ব্যাগ কিনে আরও মানুষ দাঁড়াতে শুরু করেছেন তখনও।

লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা সকালে একবার এলাকা ঘুরে ট্রাক না দেখে চলে যান। পরে ট্রাক আসার খবর পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এদিন বাকি চারটি স্থানেও দেরিতে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলে সকালে পণ্যপ্রত্যাশীরা একবার এসে চলে গেছেন।

সারিতে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার বলেন, টিসিবি বা খাদ্য অধিদপ্তরের পণ্য দেওয়ার আগে স্থানীয় প্রতিনিধিরা আগের দিন জানিয়ে দিতেন। ফলে মানুষের সুবিধা হতো। কোন স্থানে পণ্য বিক্রি হবে, সেটি আগে থেকে স্থানীয়ভাবে জানিয়ে দিলে সুবিধা হবে।

চট্টগ্রাম নগরে পণ্য বিক্রির স্থান কেবল পাঁচটি। ক্রেতাদের ভাষ্য, লোকসংখ্যা অনুপাতে এটি নগণ্য। কৃষিপণ্য ওএমএসের সারিতে থাকা বাবুল দত্ত নামের এক ক্রেতা জানান, চট্টগ্রামের ঘনবসতি এলাকাগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। এসব এলাকায় এভাবে সবজি বিক্রি করা দরকার। কারণ, এখানে বাজারের তুলনায় প্রায় ২৫০ টাকার বেশি সাশ্রয় হচ্ছে। তাই মানুষের আগ্রহ থাকবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের পাঁচটি স্থানে যাঁরা তদারকি করছেন, তাঁরা বিভাগের অন্যান্য জেলার কর্মকর্তা। জানা গেছে, তাঁরা কক্সবাজার, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলা কৃষি বিপণন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি প্রথম আলোকে বলেন, জনবল–সংকটের কারণে নগরে স্থান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিদিন স্থান পরিবর্তন করার। যাতে আরও বেশি এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।

প্রথম আলো

এগ্রিকেয়ার