মানিকগঞ্জে আগাম সবজি চাষে কৃষকদের স্বপ্ন অধিক লাভ
মানিকগঞ্জে আগাম সবজি চাষে কৃষকদের স্বপ্ন অধিক লাভ

শীতকালীন আগাম সবজি চাষে অধিক লাভের আশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনুকূল আবহাওয়ায় উত্তম পরিচর্যায় বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকায় আগামজাতের সবজি চাষে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকেরা। বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো থাকলে আগাম সবজিতে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।

শীতকালীন আগাম সবজি চাষে অধিক লাভের আশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনুকূল আবহাওয়ায় উত্তম পরিচর্যায় বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকায় আগামজাতের সবজি চাষে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকেরা। বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো থাকলে আগাম সবজিতে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিনে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের চামারখাই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর থেকে সবজি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউ ফুলকপি ক্ষেতে আগাছা কাটছে আবার কেউ করলা ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছে। শ্রমিকদের সঙ্গে সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করতে দেখা গেছে অনেক কৃষককে।

মানিকগঞ্জ জেলার কৃষকদের দীর্ঘদিনের সুনাম রয়েছে সবজি চাষে। এখানকার জমি, জলবায়ু এবং পরিচর্যা ব্যবস্থা সবজির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। ঢাকার সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার কারণে এখানকার উৎপাদিত সবজি রাজধানীর বাজারে দ্রুত পৌঁছে যায়, যা পরিবহন খরচও কমিয়ে দেয়। এই সুবিধাগুলো কৃষকদের আগাম ও রবি মৌসুমের সবজি চাষে উৎসাহী করে তুলছে।

জেলার সাতটি উপজেলায় সবজির চাষ হলেও সিংগাইর, সাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। সারা বছরই বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয় এসব অঞ্চলে। শীতকালীন আগাম সবজি চাষে এখানকার কৃষক পরিবারগুলো বিশেষভাবে ব্যস্ত থাকে।

এ বছরও জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, করলা, মুলা, পটল, শাক এবং শসা প্রভৃতি সবজির আবাদ করা হয়েছে। কৃষকরা সকাল থেকেই জমিতে পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ আবার কীটনাশক প্রয়োগ করছেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, গত রবি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেছিল কৃষকেরা। এবছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টের জমি। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে সবজির আবাদ কমেছে ১০ হেক্টের। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সবজির।

আগাম সবজি চাষ নিয়ে কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ‘গত বছর আগাম ফুলকপি চাষ করে সবখরচ বাদে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। এ বছরও ১৮ বিঘা জমিতে এক লাখ পাঁচ হাজার আগাম ফুলকপির চারা রোপণ করেছি। এখন পর্যন্ত সাত লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ফুলকপির ফলন তুলতে পারবো। আশা করছি, অনুকূল আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলন হবে। তবে বাজারদর ভালো পেলে প্রতি পিস ফুলকপি পাইকারি দরে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হলে এ বছর ৩৫ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারব। এতে খরচবাদে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা থাকবে।

এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং ছত্রাক সংক্রমণের কারণে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। তবে কৃষি অফিসের সহায়তায় এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এবং বাজারে সবজির চাহিদা বজায় থাকে, তবে এ বছরও আগাম সবজি চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক ড. বরীআহ নূর আহমেদ বলেন, গতবছর মানিকগঞ্জে ৯ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজি আবাদ করেছিল কৃষকেরা। তবে এ বছর আবাদি জমি পরিমাণ ১০ হেক্টর কমে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা আগাম জাতের সবজি আবাদ শুরু করেছে। কিছু সবজি স্থানীয় বাজারসহ পাইকারি বাজারেও বিক্রি শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, সস্প্রতি কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন ভালো ও বাজারে সবজির দরদাম ভালো থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কৃষকেরা এ বছরও লাভবান হবে। কৃষি অফিস থেকে প্রান্তিক কৃষকদের সবসময় নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি চলতি মৌসুমে সবজির ভালো দাম পাবে কৃষকেরা।

ঢাকা পোস্ট

আআ/গ্রিকেয়ার