হাজারী লাউ চাষে সফল ময়দান আলী
হাজারী লাউ চাষে সফল ময়দান আলী

নাটোরের সিংড়া উপজেলার আয়েশ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ময়দান আলী ১৫ শতক পরিত্যক্ত জায়গায় হাজারী জাতের লাউ চাষ করে আশাতীত সফলতা পেয়েছেন। মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন এবং আরও ১০-১২ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করার প্রত্যাশা করছেন। স্থানীয় কৃষকদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে, কারণ অল্প খরচে দ্রুত ফলন এবং লাভের কারণে তাদেরও লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

বাড়ির সামনে ১৫ শতক পরিত্যক্ত জায়গায় প্রথমবারের মত হাজারী জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন ময়দান আলী নামের এক প্রান্তিক কৃষক। ওই কৃষকের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের আয়েশ গ্রামে। ১৫ শতক জমিতে লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা।

১৫ দিনে বিক্রয় করেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা। আরও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রয় করার আশা করছেন তিনি। খরচ বাদে তার সম্ভাব্য লাভের পরিমাণ প্রতি শতাংশে প্রায় ২ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প সময়ে এমন লাভের হিসাব দেখে লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। কৃষক ময়দান একজন সফল ধান ও কচু চাষী হিসেবেও এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে তার। এবার মাত্র দুই মাসের মধ্যে লাউ চাষে অভাবনীয় লাভ পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, হাজারী লাউ একটি উচ্চ ফলনশীন লাউ জাত। এ জাতের লাউ বপনের ৫ থেকে ৭ দিনে চারা হয় এবং ৪২ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে। এছাড়া ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। এ লাউ দেখতে সুন্দর ও তরতাজা। খেতেও সুস্বাদু। এছাড়া বাজারে চাহিদা ও ফলনে বেশি হওয়ায় এ লাউ চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক ময়দানের বাড়ি সংলগ্ন সবজি বাগানের মাচায় ঝুলছে লম্বা সবুজ রঙের হাজারী জাতের অসংখ্য লাউ। যেদিকে তাকানো যায় শুধু লাউ আর লাউ। বাগানের এসব ঝুলন্ত সবুজ কচি লাউ দেখলে যে কোন মানুষের চোখ জুড়িয়ে যায়।

কৃষক ময়দান এ সবজি বাগানে জৈব সারের সাথে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন। অন্য দিকে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। এজন্য বিষমুক্ত নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ময়দানের সবজি বাগানের লাউ খেতে যেমন সুস্বাদু বাজারেও এ সবজির চাহিদা বেশি।

কৃষক ময়দান আলী জানান, বাড়ির সামনে আনুমানিক ১৫ শতাংশ জায়গা সারাবছর পরেই থাকে। এ বছর স্থানীয় কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে জীবনে প্রথমবার লাউচাষ শুরু করি। হাজারী লাউ বীজ সংগ্রহ করে গত শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে বপন করেছিলাম।

দুই মাস পরিচর্যা করা পর আমার সবজি বাগানে অসংখ্য লাউ আসে। আজ থেকে ১৫-২০ দিন আগে থেকেই লাউ বাজারজাত করা শুরু করেছি। এবার বাজারে তরিতরকারির দাম বেশি থাকায় লাউয়ের দামও ভালো পাচ্ছি। এ পর্যন্ত আমি ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি।

ওজন ভেদে প্রতিটি লাউ খুচরা ৫০-৬০ টাকা এবং পাইকারী ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আরও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করার আশা করছি। মাচা তৈরীসহ আমার মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বর্ষাকালীন সবজি বা খরিপ-২ মৌসুমে সিংড়া উপজেলায় ৩১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লাউ চাষ হয়েছে ১২ হেক্টর জমিতে।

আরো পড়ুন: গোমতীর চরে বন্যার পর আবারও শাকসবজি আবাদে ব্যস্ত কুমল্লিার কৃষকরা

এ পর্যন্ত ৯ হেক্টর জমির লাউ কর্তন করা হয়েছে যা প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ২৫ টন। এখন সারা বছরই সবজির চাষ হয়। কৃষকরা জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লাউ চাষ করছেন। বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকায় ও নায্য দামে বিক্রি করতে পেরে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার আয়েশ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ময়দান আলী ১৫ শতক পরিত্যক্ত জায়গায় হাজারী জাতের লাউ চাষ করে আশাতীত সফলতা পেয়েছেন। মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন এবং আরও ১০-১২ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করার প্রত্যাশা করছেন। স্থানীয় কৃষকদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে, কারণ অল্প খরচে দ্রুত ফলন এবং লাভের কারণে তাদেরও লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

সোনার দেশ

আআ/এগ্রিকেয়ার