মৃত্যুঞ্জয় রায়, এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  বসতবাড়ির আঙিনায় থাকুক অন্তত বারো মাসের বারোটি ফলের গাছ। এজন্য প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে। তালিকা ১ থেকে বেছে নিতে হবে পছন্দের ফলের গাছ। বাড়িতে যেসব ফলের গাছ আছে সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে হবে। আসুন আমরা এমনই বারো মাসের ১২ টি ফলের গাছ নির্বাচন ও উৎপাদন কৌশল বিষয়ে জানব।

দেখতে হবে বাড়িতে থাকা সেসব ফলের গাছ থেকে কোন কোন মাসে ফল পাওয়া যায়। যেসব মাসে বাড়ির বাগান থেকে কোনো ফল পাওয়া যায় না সেসব মাসে ফলের প্রাপ্যতা ও পছন্দ অনুসারে ফলগাছ বেছে নিতে হবে। ফলগাছ নির্বাচনের সময় অবশ্যই কৃষি জলবায়ু অর্থাৎ বাড়ির অঞ্চলে কোন কোন ফলের গাছ ভালো হয়, সে বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।

পড়তে পারেন: বারোমাসি সজিনা চাষে বিঘায় লাভ দেড় লাখ টাকা

যেমন- উপকূলীয় অঞ্চলে ভালো হয় নারিকেল, বাতাবিলেবু, পেয়ারা, সফেদা, চালতা, কদবেল, অরবরই, আমড়া, চুকুর, ক্ষুদিজাম, তরমুজ, আমরুল, বিলাতি গাব, হরীতকী, বহেড়া, আমলকী, কেওড়া, গোলফল, তাল, পানিফল, বৈঁচি, তেঁতুল ইত্যাদি। উত্তরাঞ্চলে ভালো হয় আম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, পেয়ারা, কুল, তরমুজ, আলুবোখারা, পিচফল ইত্যাদি।

মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে ভালো হয় আম, জাম, গোলাপজাম, জামরুল, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কুল, কলা, বেল, আনারস, হরীতকী, বহেড়া, আমলকী, তাল, খেজুর, ডেউয়া, চালতা, জলপাই, পানিফল, করমচা, কামরাঙা ইত্যাদি। পূর্বাঞ্চলে ভালো হয় আনারস, লেবু, মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, ডেফল, তৈকর, ডেউয়া, কুল, কামরাঙা, অরবরই, বিলিম্বি ইত্যাদি।

পড়তে পারেন: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘বারোমাসি তরমুজ’, বিঘায় ফলন ৮ টন

পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো হয় আনারস, কাঁঠাল, মাল্টা, আ¤্রপালি ও রাঙ্গোয়াই আম, বিলিম্বি, প্যাশন ফল, কাজুবাদাম, গোলাপজাম, লুকলুকি, গুটগুইট্টা, চুকুর বা আমিলা, চিনার, মারফা, বেল, মাল্টা, কমলালেবু, লেবু, তেঁতুল ইত্যাদি।

এসব ফলের মধ্য থেকে সাধারণভাবে বসতবাড়িতে লাগানোর জন্য মাল্টা (জানুয়ারি), কুল (ফেব্রুয়ারি), বেল (মার্চ), তরমুজ (এপ্রিল), জাম (মে), আম, লিচু (জুন), কাঁঠাল (জুলাই), পেয়ারা (আগস্ট), আমড়া (সেপ্টেম্বর), জলপাই (অক্টোবর), ডালিম (নভেম্বর), কমলালেবু (ডিসেম্বর) নির্বাচন করা যেতে পারে।

বছরের যে কোনো সময় ফল পাওয়ার জন্য বেছে নেয়া যেতে পারে নারিকেল, পেঁপে, কলা, আনারস, সফেদা ইত্যাদি ফল। এখন পেয়ারাও বারোমাস ধরছে। জাত বুঝে গাছ লাগাতে পারলে আমও ৭ মাস ধরে পাওয়া সম্ভব।

বারো মাস ফলের উৎপাদন কৌশল
পরিকল্পনা করে ফলগাছ অবশ্যই লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে আধুনিক চাষাবাদের সব নিয়ম মানতে হবে। বসতবাড়িতে নিরাপদ ফল উৎপাদনের সব প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে জৈব সার ব্যবহার, সুপারিশকৃত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার, বালাইনাশক ও পাকানোর জন্য কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করা ইত্যাদি অন্যতম। তালিকা ২-এ সংক্ষেপে বারো মাসে বারোটি ফলের উৎপাদন কলাকৌশল দেয়া হলো।

তালিকা-২ : বারো মাসের প্রধান ১৫টি ফলের উৎপাদন প্রযুক্তি

বড় আকৃতিবিশিষ্ট গাছের (আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি) জন্য সবদিকে ১ মিটার মাপের গর্ত তৈরি করতে হবে। মধ্যম আকৃতির গাছের (কুল, পেয়ারা, লেবু ইত্যাদি) জন্য সবদিকে ৬০-৭৫ সেন্টিমিটার মাপের গর্ত করতে হবে। ছোট গাছের জন্য (কলা, পেঁপে, ডালিম ইত্যাদি) সবদিকে ৫০ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত করতে হবে।

পড়তে পারেন: মহাদেবপুরে বারোমাসি কার্টিমন আমে স্বপ্ন বুনছেন ব্যবসায়ী আজিজুল

চারা বা কলম লাগানোর কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটির সঙ্গে পরিমাণমতো গোবর সার ও অন্যান্য সার মিশিয়ে গর্ত ভরতে হবে। গর্তের মাঝখানে চারা কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি ভালো করে চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ও ঘেরা দিয়ে চারা রক্ষা করতে হবে। লাগানোর পর সেচ দিতে হবে। নিচের ছকে উল্লেখিত পরিমাণে সার দিতে হবে।

বছরে দুইবার সার দিতে হবে- বর্ষার আগে একবার ও বর্ষাকালের পরে আর একবার সার দিতে হবে। প্রতি বছর গাছের বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ঠিকমতো ডালপালা ছাঁটাই ও বালাই ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

বারো মাসের ১২ টি ফলের গাছ নির্বাচন ও উৎপাদন কৌশল লেখা লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায় উপ-প্রকল্প পরিচালক, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ