কৃষির আধুনিকায়নই তামাক চাষে

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সামগ্রীক অর্থে কৃষির আধুনিকায়নই তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করবে চাষিদের বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেছেন, কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণ্যিজ্যিক  কৃষি, আধুনিক কৃষি করা গেলে ২০৪০ সালের আগেই তামাক মুক্ত সমাজ গড়া যাবে। এরই মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্র অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণ জরুরী।

আজ রোববার (১২ মে) রাজধানীর আগারগাঁওতে পিকেএসএফ এর অডিটোরিয়ামে তামাক বিরোধী জাতীয় প্ল্যাটফর্ম এর উদ্যোগে সেমিনার ও তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক-২০১৯ ’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।



কৃষিমন্ত্রী বলেন, তামাক ও তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো থেকে প্রতিবছর সরকারের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে, পরোক্ষভাবে তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত লোকদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য।

শুধু যারা ঢাকায় বসবাস করে, তারা সঠিকভাবে তাদের ট্যাক্স দিলে তামাক কোম্পানির এই ট্যাক্স পরিহার করা সহজ হবে এবং তামাক উৎপাদনও বন্ধ করা যাবে। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।

এর জন্য প্রয়োজন উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যাযমূল্য নিশ্চিত করা। কৃষিপন্যের ন্যাযমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষির আধুনিকায়ন, যান্ত্রিকিকরণ এবং রপ্তানির বাজার অপরিহার্য। সামগ্রীক অর্থে কৃষির আধুনিকায়নই তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করবে চাষিদের ।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ২০৪০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে তামাক শতভাগ নির্মূল ।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপনায় দেখান হয়, বিশ্বের তামাক উৎপাদনকারি ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম, প্রথমে আছে চীন। বাংলাদেশের মধ্যে তামাক উৎপাদনকারী জেলার মধ্যে প্রথম হচ্ছে কুস্টিয়া জেলা।

তামাক চাষের নিবিরতা ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৪৫% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১৩% হয়েছে। এতে আরো দেখানো হয় যে সামগ্রীক ভাবে তামাক চাষের চেয়ে সবজি চাষ লাভজনক।

তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা গেলে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙ্গে কৃষি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ অনুযায়ী, বর্তমান দেশে মোট তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৮ লোখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) ৩৫.৩ শতাংশ।

ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার অনেক বেশি। তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ ওই সময় অনুযায়ী ২ হাজার ৬শ কোটি টাকা।

যুগ যুগ ধরে অবহেলিত কৃষকের হয়ে খুব কম মানুষই কথা বলেছে


প্রতিবছর সিগারেট ক্রয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ ও বিড়ি ক্রয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় হয়।বর্তমানে এই ক্ষতির পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেড়েছে।শুধু ধূমপানের কারণেই আয়ুষ্কাল কমে যায় ১০ থেকে ২০ বছর। বিশ্বে যত লোক মারা যায়, তার দ্বিতীয় প্রধান কারণ ধূমপান।

অনুষ্ঠানে তামাক বিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রনী ভূমিকার জন্য প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি উদ্যোগ, গবেষণা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ পদক প্রদান করা হয় মোট চার জনকে। সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত।

পিকেএসএফ এর সভাপতি ড. খলীকুজ্জমান আহমদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিয় আধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আব্দুল মালিক।

কৃষিমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।