খাদ্য অপচয় রোধে মানসিকতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খাদ্য অপচয় রোধে মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের ফলে নানাধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, গ্যাস্ট্রিক, স্থূলতা, খাদ্যে বিষক্রিয়া, উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতিতে ভুগেন ঢাকার অধিকাংশ মানুষ, তারপরও বাইরে খাবার খাওয়া শহুরে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর, ২০১৯) ঢাকার গুলশানে হোটেল সিক্স সিজনে হোটেলে একশনএইড এবং ম্যাকম এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণার উপস্থাপন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে ওই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ঢাকার বিভিন্ন বয়সসীমার মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশের দাবি তারা অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে অবগত অপরদিকে প্রায় ৭০ শতাংশই সমস্যাগুলোতে ভুগেছেন বা ভুগছেন।



গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের মতে সবচেয়ে বেশি খাদ্য অপচয় হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে।

এই গবেষণাটি ঢাকা বিভিন্ন বয়সের মানুষের, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর খাদ্যগ্রহণের সার্বিক প্রবণতা বোঝার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রাথমিক ধাপ, বলেন আয়োজকরা।

গবেষণাপত্র উপস্থাপনকালে ম্যাকম এর সহকারী ব্যবস্থাপক শারমিন হেলাল বলেন, গবেষণা পরিচালনার সময় দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার মধ্যে ৯১ শতাংশ অংশগ্রহণকারীদের বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বেশি। দ্রুত পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রেস্টুরেন্টের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি হচ্ছে ভোক্তাদের মধ্যে বাইরে খাওয়ার প্রবণতা।

আর এদের মধ্যে ৪৪ শতাংশের পছন্দ ফাস্টফুড, ২৭ শতাংশের চাইনিজ, ১৪ শতাংশের ভারতীয় খাবার। তবে বাইরের এসকল খাবারের পাশাপাশি ৪৫ শতাংশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বাঙালি খাবারও।

উক্ত বয়সসীমার তরুণদের মধ্যে ৫০ শতাংশ রেস্টুরেন্টে খেতে যান মাসে ২ থেকে ৪ বার এবং ৯১ শতাংশের পছন্দ সেট মেনু অথবা মেনু কার্ড থেকে খাবার নির্বাচন করা।

৭ শতাংশ পছন্দ করেন বুফে। তবে বুফে খাওয়ার প্রবণতা ২৫ থেকে ৩০ উর্ধ্ব বয়সসীমার মানুষের মধ্যে তুলনামূলক বেশি, প্রায় ১১ শতাংশ।

২৫ থেকে ৩০ উর্ধ্ব মানুষের মধ্যে ৫৭ শতাংশ তাদের বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত খাবার পরবর্তীতে খাওয়ার জন্য রেখে দেন, ৩০ শতাংশ অন্যদের দিয়ে দেন এবং ৭ শতাংশ ফেলে দেন বলে এই জরিপে জানা গেছে।

খাদ্য অপচয়ের ক্ষেত্রে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার ৫২ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ৩০ উর্ধ্ব বয়সসীমার ৫৭ শতাংশ মনে করেন বিয়ের অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনা শেষে আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রিচার্ড র‌গান, একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির এবং শেফ টনি খান। খাদ্য অপচয় রোধে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

আলোচনায় ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, খাদ্য অপচয় রোধে পরিমিত খাবার গ্রহণের আচরণের দিকে আমাদের যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রিচার্ড র‌গান বলেন, বিশ্বায়নের ফলে আমাদের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে খাবার অপচয়ের ক্ষেত্র।

একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের মধ্যে লক্ষ্য ১২ (টেকসই ভোগ ও উৎপাদন) অন্যতম প্রধান লক্ষ্য যার একটি উদ্দেশ্য হলো বিক্রয় এবং ভোক্তা পর্যায়ে বৈশ্বিক খাদ্য অপচয় মাথাপিছু অর্ধেকে কমিয়ে আনা, ফসল কাটার পরবর্তী ক্ষয়-ক্ষতিসহ উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইনে খাদ্যদ্রব্যের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রেণীভেদে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। কিন্তু কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কোন সহজলভ্য বিকল্প জায়গা না পেয়ে বর্তমান তরুণরা রেস্টুরেন্টমুখী হচ্ছে।

খাবারের ক্ষেত্রে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন শেফ টনি খান।

ম্যাকমএর সিইও রাবেত খান বলেন, এই গবেষণায় দেখা গেছে ২৭ শতাংশ মানুষ বলছেন সুপারস্টোর থেকে অতিরিক্ত খাবার কেনার ফলে তা অপচয় হচ্ছে।

পানি অপচয়ের বিষয়টিও উঠে এসেছে এই গবেষণার মধ্য দিয়ে। ৮৮ শতাংশ মানুষ বোতলজাত মিনারেল পানি ব্যবহার করেন।

ঢাকার ৫টি এলাকা উত্তরা, গুলশান-বনানী-বারিধারা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এবং পুরান ঢাকার ১৫০০ মানুষের উপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হয় যেখানে অতিরিক্ত খাদ্যভোগের প্রবণতার ফলে খাদ্য অপচয়ের হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

খাদ্য অপচয় রোধে মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ সংবাদটির তথ্য একশনএইড বাংলাদেশ যোগাযোগ কর্মকর্তা ওয়াহিদা জামান সিথি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন।