জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে প্রতিবছরই

আবু খালিদ, সিনিয়র রিপোর্টার, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে প্রতিবছরই বাড়ছে লবণাক্ত জমির পরিমাণ, অশনি সংকেত কৃষিতে। ৭০ এর দশক থেকে চলতি সময় পর্যন্ত দেশে লবণাক্ততা পরিমাণ বাড়ছেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকলে হুমকির মুখে পরবে কৃষিজমি ও খাদ্য উৎপাদন। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি পরবে।



এই অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষেতের প্রায় পুরো ফসলই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সূত্রে এমনই সব তথ্য ওঠে এসেছে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র বলছে, ১৯৭৩ সালে সারাদেশে লবণাক্ত এলাকার বিস্তৃতি ছিল ৮ লাখ ৩ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ২০ হজার হেক্টরে। আর ২০০৯ সালে বেড়ে ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরে পৌঁছায়। গত ৩৫ বছরে প্রায় ২৬ ভাগ লবণাক্ত অঞ্চল বেড়েছে।

আর বাংলাদেশ সেন্ট্রাল অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ (বিসিএএস) সূত্রে জানা যায়, ৭০ এর দশকে দেশে লবণাক্ততার মাত্রা ২.৮ থেকে ১৮.৫ ডিএস/মিটারের মধ্যে ছিল। বর্তমানে ৪ থেকে ৪২.৮ ডিএস/মিটার হয়েছে।

লবণাক্ততা অঞ্চলে নদীর পানিতেও লবণাক্ততার মাত্রা ১২.৯ ভাগ থেকে বেড়ে ২৪.৫ ভাগে পৌঁছিয়েছে। এমনকি ভূগভর্স্থ পানিতেও লবণাক্ততা ৫.৮ ভাগ থেকে বেড়ে ২৫.৬ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে।

বিসিএএস সূত্র জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা গত ৩০ বছরে ৪১.৪ সেন্টিমিটার বেড়ে যাওয়াতে এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ত হয়েছে। এভাবে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫৯.৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন করে দুই লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি লবণাক্ত হয়ে যাবে।

আর ১৯৭৫-৭৬ সালে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা ছিল। অথচ ২০০৮-০৯ সালে এক লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী ড. প্রাণেশ কুমার সাহা এর মতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে মাটিতে যে সব উপাদান থাকে সেই সব উপদানের মধ্য একটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের অনুপাতের সঙ্গে তারতম্য তৈরি হয়। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যহত হয়।

আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ ইউএসএইডের অর্থায়নে ইরি বীজ প্রকল্প জিআইএস ম্যাপের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলের ১২টি লবণাক্ত অঞ্চল চিহ্নিত করেছে।

জেলাগুলো হলো বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল। এসব জেলায় মোট লবণাক্ত জমির পরিমাণ ৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর। এর মধ্য ছয়টি জেলায় বেশি লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্টের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ত পানি জমিতে প্রবেশ করছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রে পানি প্রবেশ করছে জমিতে। ফলে কৃষিজমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রথমের দিকে লবণাক্ত জমির পরিমাণ উপকূল অঞ্চলের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে সাধারণ জমিতে প্রবেশ করছে।  এটা কৃষির জন্য অশনি সংকেত।

ইরির বীজ প্রকল্প এই চিহ্নিত এলাকাগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয়, স্থানীয় এনজিও, বীজ উৎপাদনকারী ও বিপণন সংস্থাসহ কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিত করছে।

এদিকে জলবায়ু নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন মানবসভ্যতার প্রতি বিশ্বের অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর একটি উল্লেখ করে তারা বলছেন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকুলীয়ু নিচু এলাকাগুলো। সেসব এলকায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লোনা পানি বেড়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: পানি ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন সময়ের দাবি