জলবায়ু বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জলবায়ু বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বরাদ্দকৃত বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং প্রভাব পরিমাপের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সরকারি, বেসরকারি ও সুশীল সমাজ সংস্থাসমূহের সম্মিলিত উদ্যোগে মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি।



তারা আরও বলেন, পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জলবায়ু বাজেট বাস্তবায়নের যথার্থতা নিশ্চিতে জলবায়ু ও দুর্যোগ বিষয়ক গবেষণা ও জ্ঞান ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯) ঢাকার ডেইলি স্টার সেন্টারে একশনএইড বাংলাদেশ এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভলপমেন্ট-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু বাজেট ২০১৯-২০ অর্থবছর : সুশীল সমাজ সংস্থার বিশ্লেষণ ও প্রতিফলন’শীর্ষক  গোলটেবিল আলোচনায় এ দাবি জানানোর পাশাপাশি এসব কথা বলেন তারা।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভলপমেন্ট-এর পরিচালক ড. সলিমুল হক বলেন, ‘জলবায়ু বাজেট প্রতিবছর বৃদ্ধি পেলেও এর প্রভাব পরিমাপ করা জরুরি।

বরাদ্দকৃত বাজেটের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বাজেট পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে যার পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আরো কার্যকরী জলবায়ু বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরো বলেন, উন্নত জলবায়ু বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গবেষণা, জ্ঞান তৈরি ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ আরো বাড়ানো প্রয়োজন।

দুর্যোগকালীন জরুরি সহায়তার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোকে মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে যেন পরবর্তী দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর রেজিলিয়েন্স এবং ক্লাইমেট জাস্টিস ইউনিটের প্রধান তানজীর হোসেন এবং প্রোগ্রাম কর্মকর্তা লামিয়া হোসেন।

লামিয়া হোসেন জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত ক্রমসঞ্চিত বাজেট মোট জাতীয় বাজেটের ৫৮.১১ শতাংশ। এই মোট বরাদ্দের ৭.৮১ শতাংশ হল জলবায়ু সম্পর্কিত।

অর্থাৎ, এই ৫ বছরে জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে ১২,১৬৩.৩৬ কোটি টাকা থেকে ২৩,৭৪৮.৫৩ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জিডিপির মাত্র ০.৮ শতাংশ। গতবছরের তুলনায় এবছর মোট জাতীয় বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ ০.১২ শতাংশ কমেছে।

ধারণাপত্রে বলা হয়, বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলি সবুজ উদ্যোগ নেয়া হলেও তার পাশাপাশি এমন অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে যা জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখছে।

তাই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় বিনিয়োগেরই তথ্য আগামী জলবায়ু বাজেট রিপোর্টে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তানজীর হোসেন বলেন, জলবায়ু সম্পর্কিত বরাদ্দ এবং ব্যয় কিভাবে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে এবং আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য, প্রতিটি প্রকল্প ও কাজের ফলাফল পরিমাপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সেজন্য প্রয়োজন যৌথ মনিটরিং টাস্ক ফোর্স (জেএমটিএফ) গঠন করা। সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ সংস্থা এবং বেসরকারি খাতসমূহের অংশগ্রহণে এই টাস্কফোর্স বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পারফরম্যান্স অডিট পরিচালনা করতে সহায়তা করা, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করার মত কাজ করবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব এম. খালিদ মাহমুদ মনিটরিং কমিটির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজেট ব্যবস্থাপনা জোরদার করা সম্ভব।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. মিজানুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু বাজেট ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, বাংলাদেশ সরকার সুদূরপ্রসারী নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং এডভোকেসির মাধ্যমে আরো বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব।

তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোরও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বাজেট তৈরি ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন দক্ষতা বৃদ্ধি, যথাযথ গবেষণা ও বিশ্লেষণ।

 জলবায়ু বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং কমিটি গঠনের দাবি সংবাদটির তথ্য একশনএইড বাংলাদেশ যোগাযোগ কর্মকর্তা ওয়াহিদা জামান সিথি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে প্রতিবছরই বাড়ছে লবণাক্ত জমির পরিমাণ, অশনি সংকেত কৃষিতে