নওগাঁয় কমছে জমির উর্বরতা, বাড়ছে খরচ
নওগাঁয় কমছে জমির উর্বরতা, বাড়ছে খরচ

অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের আশায় নওগাঁয় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের প্রয়োগে নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণাগুণ। জেলায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থাকলেও ল্যাবের অভাবে নেই মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ। আবার প্রতিষ্ঠানটির সেবা ও সুবিধার খবর জানেন না বেশিরভাগ কৃষক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সেবা। তবে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে চাষাবাদ করা গেলে ফসল উৎপাদন খরচ ও রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা অনেকটা কমে আসবে।

উত্তরের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। জেলার দুই লাখ ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি আবাদি জমিতে প্রায় সারাবছরই চলে ফসল উৎপাদন। এখানকার উৎপাদিত ধান ও সবজি যায় দেশের অন্যান্য জেলায়ও।

কিন্তু ফসল উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করছেন। ফলে জমিতে পাঁচ ভাগ জৈব পদার্থের পরিমাণ থাকার কথা থাকলেও তা নেমে এসেছে এক দশমিক ৫ শতাংশে। এতে মাটির গুণাগুণ ও উর্বরতা শক্তি কমার সাথে বাড়ছে ফসল উৎপাদনের খরচ। মাটিতে নোনা ধরে মাটির স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকের।

তবে সময়ের সাথে সচেতনতা বাড়ায় অনেক কৃষকই মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফসল চাষাবাদ করছেন। এতে কৃষকের অর্থের সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ।

একজন কৃষক বলেন, ‘আমি গত তিন বছর আগে মাটি পরীক্ষা করেছিলাম। আগে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে মাটি পরীক্ষা করার পর এখন পরামর্শ নিয়ে তার চেয়ে কম খরচে চাষাবাদ করতে পারি।’

কৃষকের সুবিধার্তে ২০২০ সালে জেলায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে নেই মাটির গুণাগুণ পরীক্ষার ল্যাব। ফলে বাধ্য হয়ে রাজশাহী থেকে মাটি পরীক্ষা করাতে লাগছে দীর্ঘ সময়। আবার গবেষণাগারে মাটি পরীক্ষার খবরই জানেন না অধিকাংশ কৃষক। যদিও ফসল উৎপাদন ও জমির উর্বরতা বাড়াতে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একটা মৃত্তিকা পরীক্ষাগার যদি স্থাপিত হয় তাহলে এই অঞ্চলের কৃষক মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে তারা সার সুপারিশ করতে পারবে। এতে করে আমাদের মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে।’

এ অবস্থায় মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলায় দ্রুত পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি কৃষকদের।

একজন কৃষক বলেন, ‘মাটি পরীক্ষা করে মাটিতে কী রকমের সার দেয়া প্রয়োজন সেরকম একটা ব্যবস্থা করে সার দেয়া উচিত।’

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে মাত্র ৬৩ টাকায় মাটির ১১টি উপাদান পরীক্ষা করা যায়। মাত্র তিন দিনে মেলে ফলাফল। এতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করায় আবাদ ভালো হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমায় লাভবান হন কৃষক।

নওগাঁ আঞ্চলিক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নায়মুল হাসান বলেন, ‘আমাদের নওগাঁ থেকে মৃত্তিকা পরীক্ষাগার যদি থাকতো সেক্ষেত্রে কৃষকরা যেমন তাদের জমিতে সুষম মাত্রায় সার দিতে পারবে এতে তাদের অর্থনৈতিক খরচটা কমে যাবে। কারণ সারের অপচয় হবে না। আবার মাটির স্বাস্থ্যটাও ভালো থাকবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মাটি পরীক্ষা করা হলে জেলার কৃষকদের বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৪০ কোটি টাকা। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।

এখর টিভি

আআ/এগ্রিকেয়ার