কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, বাকৃবি থেকে: খামারীরা না বুঝে পুকুরে একগাদা প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয় ঔষধ দেয়, ফলে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যায়, মানব স্বাস্থের জন্য অনিরাপদ মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

অত্যাধনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ এর সাথে মাছের উৎপাদন নিয়ে গবেষণায় এমন তথ্য বের হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাকৃবি’র মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের উদ্যোগে এবং ওয়ার্ল্ড ফিড সেন্টার এর সহযোগিতায় “Emerging Aquaculture  System and Development” শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডীন কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অধিক অক্সিজেনের থাকে অপরদিকে গভীর রাতে ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পানিতে অক্সিজেনের শূন্যর কোঠায় থাকে। দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হয়।

খামারীরা না বুঝে একগাদা প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয় ঔষধ দেয়, ফলে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যায়, মানব স্বাস্থের জন্য অনিরাপদ মাছ উৎপাদিত হয়। দুগর্ন্ধ সৃষ্টি হয়, বাজার মূল্য কমে যায়, উৎপাদন খরচ কমে যায়। এজন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহের জন্য পানিতে ফোয়ারা বা এরেটর ব্যবহার করে মাছ চাষে আমূল পরিবর্তন সম্ভব।

কর্মশালায় বাকৃবি মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টের পিআই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক আরও বলেন, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে আমরা অবস্থান করে নিতে পারলেও রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে আছি।

তিনি জানান, গুণগত মান ও স্বীকৃতির অভাবে আমরা পিছিয়ে আছি। লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারীদের। একমাত্র পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে মাছের উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের বর্তমান মাছ চাষের গুরুত্ব তুলে ধরেন। কর্মশালায় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক এর সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ এবং জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলার ৩০ (ত্রিশ) জন তেলাপিয়া এবং পাঙ্গাশ মাছ চাষী উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠিত কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে পুরাতন পুকুরের কারনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন মাছের রোগ, মাছের গুনগত মান, মাছের দুর্গন্ধ, পরিবেশ নষ্ট, পানির দুর্গন্ধ এবং মোবাইল ফোনে এপস্ এর মাধ্যমে মৎস্য চাষীদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে গবেষণার ফলাফল এবং করণীয় আলোচনা করা হয়।

কর্মশালায় আরবান (এনজিও) এর পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান এবং একোয়াকালচার বিভাগের শিক্ষক, ছাত্র এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।