মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর মধ্যে পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পাবদা মাছ রক্ষার জন্য নিন্মোক্তভাবে প্রজনন কৌশল পরিচালনা সম্ভব।

প্রজননের জন্য ব্রুড প্রতিপালন:গুণগতমানসম্পন্ন পোনা উত্পাদনের জন্য প্রজনন ঋতুর ৪ থেকে ৫ মাস আগে থেকেই ব্রুড মাছগুলোকে বিশেষ যত্নের সঙ্গে লালন পালন করা উচিত। এ সময় খাবার হিসেবে ফিশমিল, চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, আটা এবং ভিটামিনের প্রিমিক্সের মিশ্রণ মাছের মোট ওজনের ৫ থেকে ৮ ভাগ দিতে হবে। ডিম্বাশয়ের পরিপক্বতা আনায়নের জন্য ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যপ্ততার জন্য নিয়মিত গোবর, ইউরিয়া ও টিএসপি পরিমাণ মতো দিতে হবে।

প্রজনন উপযোগী মাছ বাছাই: পাবদা মাছের পুরুষ ব্রুড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে স্ত্রী মাছের চেয়ে ছোট। পুরুষ মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট চাপা থাকে এবং পুরুষ মাছের বক্ষ পাখনা খাঁজকাটা থাকে। স্ত্রী ব্রুড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে পুরুষ মাছ থেকে বড় হয়। স্ত্রী মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট ফোলা ও নরম থাকে এবং স্ত্রী মাছের বক্ষপাখনা তেমন খাঁজকাটা থাকে না।

মাছ টেকসইকরণ: ইনজেকশন দেয়ার ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আগে মাছ ধরে সেগুলোকে পুকুরে স্থাপিত গ্লাস নাইলনের হাপাতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় পর্যন্ত অক্সিজেনের জন্য মাছকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপের সাহায্যে ওপর থেকে অনবরত পানির ফোয়ারা দিতে হবে।

ইনজেকশন প্রদান: পাবদা মাছের প্রণোদিত প্রজননের জন্য পিজি এবং এইচসিজি দু’টোই ব্যবহার করা যায়। মাছকে মাত্র একবারই ইনজেকশন দিতে হয়। পিজির জন্য সবচেয়ে ভাল মাত্রা হচ্ছে প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য ১২.০ মি. গ্রা. এবং প্রতি কেজি স্ত্রী মাছের জন্য ১৮.০ মি.গ্রা। ইনজেকশন দেয়ার সময় ভেজা কাপড় দিয়ে মাথা জড়িয়ে পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ কোণে ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশন দেয়ার ৯ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে হাপাতেই প্রাকৃতিক প্রজনন ক্রিয়ার মাধ্যমে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে ওই ডিম নিষিক্ত করে।

নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ এবং স্থানান্তর: ডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মাছগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে হাপা থেকে সরিয়ে ফেলতে এবং ডিমগুলোকে ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে ট্রে ও পুকুরের পানির তাপমাত্র যেন প্রায় একই থাকে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে পুকুরের পানি ছেঁকে ট্রেতে দেয়া যেতে পারে। ডিম স্থানান্তর করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেতে ওপর থেকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ দিয়ে অনবরত পানি সরবরাহ করতে হবে যাতে ডিমগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। এভাবে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।

রেনু পোনার প্রাথমিক খাবার প্রদান: ট্রেতে ডিম থেকে ফোটার ২১ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রেনু পোনাকে প্রাথমিক খাবার দিতে হবে। প্রাথমিক খাবার হিসেবে টিউবিফিসিড ওয়ার্ম সবচেয়ে ভাল। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম ছোট বাটিতে নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিতে হয়। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম না পাওয়া গেলে পুকুর থেকে জুপ্লাংকটন ধরে সুক্ষ্ম ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ট্রেতে দিতে হবে।

রেনু পোনার পরিচর্যা: পোনার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার খাবার দিতে হবে। এভাবে ৬ থেকে ৮ দিন ট্রেতে প্রতিপালন করার পর পোনাগুলোকে সিস্টার্নে স্থানান্তর করতে হবে। ২.৪, ১.৩, ০.৫ ঘনমিটার সাইজের সিস্টার্নে ৩০০ থেকে ৫০০টি পোনা লালন করা যাবে। পানির উচ্চতা ৩০ থেকে ৪০ সে.মি. বজায় রাখতে হবে। সিস্টার্নে ১০ থেকে ১৫ দিন প্রতিপালন করার পর পোনার আকার ২ থেকে ৩ সে.মি হলে পোনাগুলোকে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা যাবে।

নার্সারি পুকুরে পোনা প্রতিপালন: নার্সারি পুকুরের আয়তন ৩ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে। পুকুর প্রস্তুতির পর শতাংশে ৩০০ থেকে ৪০০টি করে পোনা ছাড়া যেতে পারে। পোনা ছাড়ার আগে ভালভাবে ছোট ফাঁস জাল টেনে পোকামাকড়, সাপব্যাঙ ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। পোনা সকাল কিংবা সন্ধ্যার আগে ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর প্রতিদিন পোনার দেহ ওজনের ১০ থেকে ২০ ভাগ সম্পূরক খাবার দিতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর জাল টেনে মাছার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

খাবার উপযোগী পাবদা মাছ উত্পাদন: অন্যান্য মাছের মতই পাবদা মাছের চাষ করে লাভজনক উত্পাদন সম্ভব। পাবদা চাষের জন্য ছোট থেকে মাঝারি আকারের পুকুর উত্তম। সার প্রয়োগের ৭ থেকে ১০ দিন পর যখন পুকুরে পর্যাপ্ত প্লাংকটন উত্পাদন হবে তখন পুকুরে প্রতি শতাংশে ১০০ থেকে ১৫০টি হারে ১ থেকে ২ ইঞ্চি সাইজের পাবদার পোনা মজুদ করতে হবে। মাছকে তাদের দেহ ওজনের ৫ থেকে ৮ ভাগ পাঙ্গাসের স্টার্টার-২ খাবার বা হাত মেশিনে প্রস্তুত খাবার দিতে হবে। এভাবে এক বছরে মাছ বাজারজাত উপযোগী আকারে (৬০ থেকে ৮০ গ্রাম) পৌঁছায়।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ