নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বান্দরবন জেলার রুমা, থানচি এবং আলিকদমসহ বিভিন্ন পাহাড়ে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন চলছে ও পাহাড়ের ঝিরি থেকে বেপরোয়াভাবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ মঙ্গলবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও সেভ দ্যা হিল এন্ড ফরেস্ট-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ অভিযোগ তোলার পাশাপাশি এসব কার্যক্রম দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে “বান্দরবানে পাহাড়ি ইকোসিস্টেম ধ্বংসযজ্ঞ চলছে; বান্দরবনে পাথর উত্তোলন ও বৃক্ষ নিধন বন্ধ কর শীর্ষক মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জীববৈচিত্র্যের আধার পাহাড়ের প্রাচীন ও বৃহৎ বৃক্ষ কেটে ফেলা হচ্ছে। বৃক্ষ নিধন এবং পাথর উত্তোলনের ফলে অস্বাভাবিকভাবে ভূমি ক্ষয় এবং ভূমি ধস বেড়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাহাড়ে পানিশূন্যতা দেখা দিবে ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে।
তারা বলেন, এরফলে পাহাড়ি ইকোসিস্টেম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে, আদিবাসীরা এলাকাছাড়া হওয়ার পাশাপাশি দ্রুত পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে। তাই অবিলম্বে পরিবেশের রক্ষার স্বার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা থেকে বৃক্ষ নিধন ও ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, সেভ দ্যা হিল এন্ড ফরেস্ট-এর আহব্বায়ক শিশির সালমান, সদস্য সচিব ছোটন মো. রহমতুল্লাহ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ-এর সভাপতি নাজিম উদ্দিন, ইয়ুথ সান-এর সভাপতি মাকিবুল হাসান, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান আতিক মোর্শেদ, নির্বাহী পরিচালক সুমন মাহ্মুদ, পুষ্প সাহা পুকুর রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির খান মিন্টু, নাসফ-এর সহ-সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, সেভ দ্যা হিল এন্ড ফরেস্ট-এর সহ-সম্পাদক মো. জিয়াউল হক প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ এনে বলেন, গত ১৪ বছরে সাংগু রিজার্ভ ফরেস্ট হারিয়েছে তার ৫০ শতাংশ পুরোনো গাছ। ২০০৪ সালের সাথে ২০১৮ সালের স্যাটেলাইট ইমেজারি তুলনা করলে দেখা যায় সাংগু উপত্যাকার অনেকটাই সাফ হয়ে গেছে। সাংগু রিজার্ভ ফরেস্টের বড় বড় গাছ কেটে সাংগু এবং মাতামুহুরি বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়েই এই কাঠ নদীতে ভাসিয়ে শহরে আনা হচ্ছে।
প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়েই চোরাকারবারিরা এসব কার্যক্রম প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এনে তারা জানান, জুমচাষের নামে পাহাড়িদের ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়ে লগার তথা অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে এই ধ্বংসলীলা আড়াল করে যাচ্ছে। ছোট বড় বহু সিন্ডিকেট আছে যারা সাংগু-মাতামুহুরি জোনে তাদের এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, এরা প্রথমে একটা পাড়া টার্গেট করে। কারবারির সাথে বৈঠকে বসে বিভিন্ন লোভ দেখায়, নগদ মোটা অংকের টাকাও অফার করে। নানাভাবে এই সংঘবন্ধ চক্র তাদের কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারিরা পাহাড়ি দুর্গম জায়গায় আস্তানা গেড়ে দিনের পর দিন ধ্বংস করছে বনজ সম্পদ।
বক্তারা আরো বলেন, বৃক্ষ নিধনের সাথে সাথে পাহাড়ি ঝিরির পাথর উঠানো হচ্ছে সমানতালে। এখন থানচি-লিকড়ি, আলীকদম-পোয়ামুহুরি সড়কের কাজ চলছে। এই সড়কের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ি ঝিরি থেকে উঠানো পাথর। ফলে পাহাড়ে ভূমি ধস এবং ভূমি ক্ষয় বেড়ে গেছে।