নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীতে লাল লেয়ার মুরগির ডিম মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। দেশী মুরগির ডিম হালি ৪৮ টাকা। অন্যদিকে হাঁসের ডিম হালি ৫০ টাকা ও ডজন হিসেবে ১৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলা রাজশাহীর ডিমের মূল যোগানদাতা। নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জে ডিমের দাম সবসময় কম থাকায় সেখান থেকেই আসে বেশি ডিম। তবে, খামারে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণেই ডিমের প্রতিপিসে ২ টাকা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর ২০২২) রাজশাহীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার ও লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গাতেই ডিমের দাম একই। তবে খুচরা মুদি দোকান ও টঙ দোকানগুলোতে হালিতে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা হাসিবুল আলম এসেছিলেন এক পাতা (৩০ ডিম রাখা প্লাস্টিকের পাত্র) ডিম কিনতে। ডিমের দাম শুনে কিনলেন ১০ টি ডিম। রউফ বলেন, ডিমের দাম ৬-৭ টাকা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এখন মুরগির মাংস ১৭০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা আবার খাশির মাংসের কথা জিজ্ঞেস করলাম ৯০০ টাকা। ডিমের দাম সে হিসেবে কম আছে বলে ডিম কিনেছি।

পড়তে পারেন: ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি, শীঘ্রই ব্যবস্থা

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, ডিমের যা দাম আছে তাতে কিছুটা কমতে পারে। আবার নাও কমতে পারে; বলা যায় না পোল্ট্রি সেক্টরের কথা! হটাৎ আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। আবার বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে। এটা নিশ্চিত খামারিরা কিছুটা লাভ পেয়েছে। বর্তমান দাম থাকলে তারা ভালো থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদের অসন্তোস বাড়ছে।

পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর বলেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ৩৪’শ টাকা। ডিমের পিস সর্বনিম্ন ১২ টাকা করা দরকার।

পড়তে পারেন: মুরগিতে উঠানামা, থমকে আছে ডিমের দাম

বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ডিমের দাম বেড়েছে। কাঁচাবাজারের ঠিক নাই। মাল (ডিম) একটু টান পড়লে দাম বাড়ে আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। সাদা ডিম ৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি করছি।

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক ডিমপাড়া লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর হাতবদলের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। খামার থেকে সংগ্রহ করেন একজন, সেখান থেকে ডিলারের কাছে আসতে দাম বাড়ে প্রতিপিসে ১ টাকা। আবার ডিলার নিজে নেন ৫০ থেকে ৬০ পয়সা। বাঁকি খুচরা যারা যা দামে বিক্রি করতে পারেন। তাছাড়া রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়েছে। এ কারণে বাজারে ডিমের দাম বেশি। তবে এটি বেশি নয়। উৎপাদন খরচ বেড়েছে তাই বেশি মনে হচ্ছে। আমাদের খাপ খোইয়ে নিতে হবে।

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে ২০১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। তবে, হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম বেড়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ