মনোজ কুমার সাহা, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), (বাসস): এলাকাটি জলা ভূমি বেষ্টিত। তাই সব জমিই এক ফসলী। এসব জমিতে ঘের করে কৃষক বর্ষাকালে মাছ চাষ করেন। শুস্ক মৌসুমে সেখানে চাষ করা হয় বোরো ধান। আর ঘেরের উচু আইলে সারা বছর বছর শাক, সবজি ও টমেটোর আবাদ করেন তারা।
এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রেখে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে কৃষকরা বছর জুড়েই অর্থ উপার্জন করছেন। তারা ঘেরের আইলে উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করে এবার আয় করেছে ৬২ কোটি টাকা। এটি হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের টমেটো বিক্রির খবর। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে এখানে টমেটো বিক্রি শুরু হয়টানা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলেছে টমেটো বিক্রি।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, গত মৌসুমে কলাবাড়ি ইউনিয়নে ঘেরের আইলে ৩১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ১ হাজার ২৫০ মন টমেটো ফলন দিয়েছে। সে হিসাবে কলাবাড়ি ইউনিয়নে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি কেজি টমেটো গড়ে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এই ইউনিয়নে ৬২ কোটি টাকার টমেটো কোনবেচা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৪ হাজার ২৫০ মন টমেটো বিক্রি হয়েছে। যার গড় বাজার দর ৬৮ লাখ টাকা। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি টমেটো বিক্রি শুরু হয়। ডিসেম্বের ও জানুয়ারিতে সবেচেয়ে বেশি টমেটো বিক্রি হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসে টমেটো বিক্রি শেষ হয়েছে।
কলাবাড়ি ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের কৃষক পরিতোষ হালদার বলেন, ঘেরের আইলে ১ একরে টমেটোর আবাদ করেছি। ফলন ভাল হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। শেষের দিকে প্রতি কেজি টমেটো সাড়ে ১২ টাকা দরে বিক্রি করছি। গত ৩ মাসে গড়ে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছি। ১ একরের টমেটো থেকে অন্তত ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
কলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিজন বিশ^াস বলেন, আমার ইউনিয়ন বিল বেষ্টিত। কৃষকরা খুবই পরিশ্রিমী। তারা বিলের জমিতে ঘের করে সার বছর মাছ, ধান, শাক, সবজি, টমোটোসহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে থাকে। জমির সর্বোত্তম ব্যাহার করে তারা আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া উপজেলার এ ইউনিয়নের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি খুবই চাঙ্গা ও মজবুত। টমেটো বিক্রির লাভের টাকা তারা ঘরে তুলতে পেরে আনন্দিত।
আড়তদার নিখিল বসু, পরেশ পান্ডে, শংকর হাজরা, শফিক মোল্লা, আল-আমিন মোল্লা বলেন, এ বছর কৃষক টমেটোর ভাল দাম পেয়েছে। প্রথম ৪ হাজার টাকা মন দরে টমেটো কেনা বেচা হয়েছে। শেষের দিকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মন দরে টমেটো বিক্রি হয়েছে।
গড়ে এ বছর প্রতিমন টমেটো ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আমাদের হিসাবে এই ইউনিয়নে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এ টমেটো আকারে বড়। খেতে সুস্বাদু। তাই দেশের বিভিন্ন জেলায় এ টমেটোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শ্রীনগরের মো. ইমন হোসেন রাজু নামের এক পাইকার বলেন, এই টমেটোর মান খুবই ভাল। পরিবহন করার সময় টমেটো তেমন নষ্ট হয় না। রং ও আকার আকর্ষনীয়। খেতে দারুন । এসব কারণে কলাবাড়ি ইউনিয়নের টমেটো বাজারে তুলনামুলকভাবে একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। এ টমেটো বিক্রি করে কিছু লাভ থাকে। তাই প্রতিবছর এখান থেকে টমেটো নিয়ে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করে থাকি।