মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন- হাতেগোনা ৫ থেকে ৬টি কর্পোরেট কোম্পানি চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। চাইলে চালের দাম বাড়াচ্ছে আবার স্থিতিশীল রাখছে। সেই প্রভাব পড়ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। রাজশাহীর বাজারেও অস্থির হয়েছে চালের বাজার। বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। বাধ্য হয়েই তাদের এইসব চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়নোতে হাত নেই। সবকিছু হয় অদৃশ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। কিছু বড় বড় কোম্পানি প্যাকেটজাত করে চাল বিক্রি করছে। তাদের কারণে চালের দাম বাড়ছে। সরকার সবকিছু মনিটরিং করছে ঠিকই কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে চালকল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কথার ভিন্নতা পাওয়া যাচ্ছে। একের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাতেই ব্যস্ত এ দুটি মহল।
পড়তে পারেন: গুঞ্জন মিথ্যা, চাল রফতানি বন্ধ করবে না ভারত
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম পাবার আশায় চাল মজুদ করে রাখছেন মিল মালিকরা। চালের দাম বাড়ানোর নেপথ্যে একটা অদৃশ্য সিন্ডিকেট কাজ করছে। জনগণকে জিম্মি করে এক শ্রেণীর অসাধু মিল মালিকরা মুনাফা করতে চায়।
ধান-চাল মজুদের কথা স্বীকার করেছেন খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও তারা উৎপাদনে যাচ্ছেন না। বাজারে নতুন চাল এখনও আসছে না।
এদিকে মিল মালিক সমিতি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, চালের দাম বাড়ানোতে তাদের কোন হাত নেই। বসুন্ধরা, প্রাণ, আকিজসহ ৫ থেকে ৬ টি কোম্পানি তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল মালিকদের সরকারের বেঁধে দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে ফলে তাদের মজুদ করার সুযোগ নেই।
পড়তে পারেন: ২ কোটি টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা থাইল্যান্ডের
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, আসলে সরষে ফুলেই ভুত লুকিয়ে আছে। দেশে যে পরিমান ধান উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশে চাল আমদানির মানে হয় না। বরং আমরা রফতানি করতে পারি। গত বছর চালের দাম বেড়ে গেলে বিভিন্ন জায়গায় চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছিল। সেই সময় দাম কমেছে তাহলে আবার কেন দাম বাড়ছে? সরকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জনগণকে সঁপে দিয়েছে। কোন তদারকি নেই, বাজার মনিটরিং নেই। কারণ, ঘুড়ির নাটাই তাদের হাতে।
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা চালকল সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চাকলাদার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের সরকারের বাইরে গিয়ে কিছু করার উপায় নাই। সরকারের কাছে আরো বড় হোতা বসে আছে। তারা মূলত দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের দোষারোপ করে কোন লাভ নেই। প্রাণ, আকিজ, বসুন্ধরাসহ মোট ৬ কোম্পানি মিনিকেট জিরা, আতপ সব ধরনের চাল প্যাকেট করে প্রায় বাজার ছেড়ে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিিিক্র করছে। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য মৌসুমে সব ধান কিনে মজুদ করেছে।
নগরের মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী সুশীল কুমার বলেন,‘ চালের দাম বাড়ছে। আমরা আড়তে গিয়ে চাল পাচ্ছি না। ধানের দাম বাড়ার কারনে চালের দাম বাড়তি। এক সপ্তাহ আগের চেয়ে বর্তমানে প্রতিকেজি চালে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। মিনিকেট চাল ৬০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৬৫ টাকা। আঠাস ৫০-৫২ টাকা থেকে বেড়ে ৫৮ টাকা, জিরাশাইল ৪ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য চালের কেজিতে বেড়েছে ১০-১২ টাকা। বাজারে বাসমতি ৮০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৭০ টাকা, স্বর্ণা ৪০-৪২ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৮ টাকা, গুটিস্বর্ণা ৪৫, কালজিরা আতব ৯০ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১০০, চিনিগুঁড়া ১০০ টাকা থেকে ১১০, কাটারি আতপ ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পড়তে পারেন: ৬০ লাখ টাকার চাল নিয়ে ডুবলো ট্রলার
এছাড়া বাজারে উধাও মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল। দু-এক দোকানে দেখা মিললেও ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু চালকল মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের মতে, চালের মোকাম ও মিলগুলোতে কারসাজি করে চালের দাম নির্ধারণ করা হয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটে লাভের টাকা আসে না। যা যায় সিন্ডিকেট আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের পকেটে। অল্প দাম থাকলে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি সুবিধা হয়।
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ