ছবি: এগ্রিকেয়ার২৪.কম

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড। তবে দেশটি আবারো নিজেদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। এ বছর বৈশ্বিক সরবরাহ বৃদ্ধিতে থাইল্যান্ড বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দুই কোটি টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচার সার্ভিস কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দেশটিতে দুই কোটি টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ২০২১-২২ মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন বাড়বে ২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর ভারতেও চালের উৎপাদন ভালো। দামও তুলনামূলক কম। কিন্তু গম রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর দেশটি চাল রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ফের দাবদাহ দেখা দিলে কিংবা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে উৎপাদন ঘাটতি তৈরি হতে পারে। ফলে স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ ধরে রাখতে চাল রফতানিও বন্ধ করতে পারে দেশটি। এ পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডের ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ও রফতানি বাজারে ভারসাম্য আনবে।

ইউএসডিএর পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর থাইল্যান্ড ৮০ লাখ টন চাল রফতানি করতে সক্ষম হবে। গত বছর রফতানির পরিমাণ ছিল ৬১ লাখ টন। সে হিসেবে রফতানি ৩১ শতাংশ বাড়বে। মূলত কৃষকরা রফতানিকারকদের কাছে সরবরাহ বাড়ানোয় রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে।

ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস বলছে, থাই বাথের দাম কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির চাল অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতার বাজারে দেশটি ভালো অবস্থানে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, বছরের বাকি সময় থাই চালের রফতানি চাহিদা অব্যাহত বাড়বে। বর্তমানে দেশটির চালের দাম অন্যান্য রফতানিকারক দেশের সঙ্গে টেক্কা দেয়ার জন্য উপযোগী।

থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (টিআরইএ) জানায়, মে মাসের অনেক রফতানি চুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি। এসব চুক্তি সম্পন্ন হলে ওই মাসে চাল রফতানির পরিমাণ ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টনে উন্নীত হতে পারে।

টিআরইএ আরো জানায়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে থাইল্যান্ড ২২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৬ টন চাল রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ।

বৈশ্বিক চাল রফতানিতে প্রথম ভারত, দ্বিতীয় ভিয়েতনাম। এর পরই থাইল্যান্ডের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরের এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে সর্বাধিক চাল সরবরাহ করেছে থাইল্যান্ড। এর মধ্যে অন্যতম ইরাক। এছাড়া আফ্রিকার বাজারে অব্যাহতভাবে চাহিদা বাড়ার বিষয়টিও মাথায় রাখছে থাইল্যান্ড।

অন্যদিকে এশিয়ার আমদানিকারক দেশগুলো থাইল্যান্ডের চালকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কারণ বর্তমানে ভিয়েতনামের তুলনায় থাই চালের দাম তুলনামূলক কম।

এক সময় বিশ্ববাজারে চাল রফতানিতে সবচেয়ে বড় হিস্যা ছিল থাইল্যান্ডের। কিন্তু ২০১১ সালের পর প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ে দেশটি। রফতানিকারক দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ভারত ও ভিয়েতনাম।

চাল রফতানি খাত শক্তিশালী করে তুলতে থাইল্যান্ড সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ‘থিংক রাইস, থিংক থাইল্যান্ড’ প্রচারণা কার্যক্রমে খুব কাছ থেকে কাজ করছে সরকার। এ প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য অনলাইনের মাধ্যমে দেশটির চাল রফতানি অগ্রসর করা। কানাডায় এ প্রচারণা এরই মধ্যে সাফল্য পেয়েছে।

আরেকটি সফল উদ্যোগ হলো ইন্দোনেশিয়া সরকারের সঙ্গে থাইল্যান্ড সরকারের চুক্তি। এ চুক্তির অধীনে থাইল্যান্ড প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়ার কাছে ১০ লাখ টন করে ১৫-২৫ শতাংশ সাদা চাল বিক্রি করবে। আগামী তিন বছর এ চুক্তি বহাল থাকবে। থাইল্যান্ড সরকার বাংলাদেশ, চীন ও ইরাকসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ