নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বেনাপোলে রাতের আঁধারে এক খামারির পাঁচটি গরু হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। খামারি ভেবেছেন শত্রুতার জেরে তাঁর গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। অবশেষে বেরিয়ে এলো ৫ গরুর মৃত্যু রহস্য!

বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামে খোকন শেখের খামার। গত সোমবার (১৯ এপ্রিল ২০২১) দুপুরে খামারের পাঁচটি উন্নতজাতের গরু মারা যায়। স্থানীয় চিকিৎসক জানান রোববার (১৮ এপ্রিল) রাতের কোনো একসময় গরুগুলোর শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করা হয়। বিষক্রিয়ার কারণে গরুগুলো মারা গেছে। বিষয়টি এতদূর হওয়ার পর মামলা করতে মাঠে নামে ঐ খামারি।

এদিকে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ভুল প্রমান করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, খোকন শেখের খামারে ৫ টি গরু তড়তা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। প্রতিটি গরু ১৫-২০ মিনিটের ব্যবধানে মারা গেছে। যা তড়কার লক্ষণ।

আরোও পড়ুন: গরুর তড়কা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

জানা যায় ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন খোকন শেখ। করোনা মহামারিতে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় বাড়িতে গরুর খামার দিয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন দেখছিলেন, এই খামারে একদিন তার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু শত্রুতার কারণে সেই আশা পূরণ হলো না।

খোকন শেখ বলেন, গোয়ালে সুস্থ গরু রেখে রোববার রাতে ঘুমাতে যাই। সোমবার সকালে গোয়ালে গিয়ে দেখি গরুগুলো অসুস্থ। মুখ থেকে লালা বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তিনটি গরু ও দুটি বাছুর ছটফট করতে করতে মারা যায়। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পর জানিয়েছেন ইনজেকশনের বিষক্রিয়ায় গরুগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর। এতে আমার প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খোকন শেখের প্রতিবেশী গরুর খামারি শরিফুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। সুস্থ গরুগুলোকে ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিয়মিত এসব গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। একসঙ্গে সবগুলো গরু মারা যাওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা এগ্রিকেয়ার২৪.কম বলেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন  গরুগুলো রোগের কারণে মারা গেছে। ভুক্তভোগী বলছেন ইনজেকশন দিয়ে মারা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা এক লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। যদি তারা এখন থানায় মামলা করতে চায় তাহলে করতে পারে।

শার্শা উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুমা আখতার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খোকন শেখের খামারে গরু মারা যাওয়ার বিষয়ে জানি। ঘটনার পর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও আমি সেখানে যাই। যা লক্ষণ পাওয়া গেছে তা তড়কা। কোন বিষক্রিয়ার তথ্য মেলেনি। খামারির বক্তব্য অনুযায়ী প্রতিটি গরু ১৫-২০ মিনিটের ব্যবধানে মারা গেছে।

তড়কা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তড়িৎ গতিতে গরু মারা যাওয়ার কারণে তড়কা নাম বলা হয়। গরুর দেহের লোম খাড়া হয়। দেহের তাপমাত্রা ১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। পাতলা ও কালো পায়খানা হয়। লক্ষণ প্রকাশের ১-৩ দিনের মধ্যে মারা যায়। এসব সব লক্ষণ মারা যাওয়া গরুর মধ্যে ছিল।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ