নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সুরমা ব্যতীত দেশের সকল প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। বন্যার ভয়াবহ কবলে পড়তে পারে ৮ জেলার লাখো মানুষ।

এসব তথ্য এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া।

আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, আবহাওয়া সংস্থা সমূহের গাণিতিক মডেল ভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারি কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা গঙ্গা-পদ্মা সুরমা-কুশিয়ারা তিস্তা ধরলা অথ সহ সকল প্রধান নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

পড়তে পারেন: জানা গেলো সিলেটে ভয়াবহ বন্যার ‘কারণ’

তিনি আরোও জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। সেইসাথে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে। ২৪ ঘন্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ খো: হাফিজুর রহমান জানান, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

অন্যদিকে স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বন্যায় আসাম-মেঘালয়ের ২৮টি জেলার অন্তত ১৯ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্রহ্মপুত্র ও গৌরাঙ্গ নদীর পানি অনেক এলাকায় বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে।

পড়তে পারেন: বন্যা পরিস্থিতি অবনতি, মৃত্যু ৩১

এদিকে সিলেটে বন্যার কারণ হিসেবে সারি নদ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি আব্দুল হাদি বলেন, ভূতাত্ত্বিকভাবে সিলেট একটি বৈচিত্র্যময় এলাকা। পাহাড়-টিলায় জনপদটি যেমন সমৃদ্ধ; তেমনি এখানে নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর-বাঁওড়ের কোনো কমতি নেই। তবে নদীগুলোর সব কটিরই উৎপত্তি হয়েছে ভারতে। সুরমা নদী ছাড়া বাকি নদীগুলোর অধিকাংশ এসেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল জায়গা ভারতের মেঘালয় থেকে। তাই মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের কারণে যে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়, এর সবই চলে আসে সিলেটে।

আবদুল হাই আল হাদি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি বালু-মাটি-পলি জমতে জমতে নদ-নদীগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজের কারণে নদীগুলো ক্রমে সংকোচন ও ভরাট হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে নদীশাসনের নামে নদী-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। যত্রতত্র স্লুইসগেট ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণেও নদীর প্রবাহপথ আরও বেশি সংকুচিত হয়েছে।

এতে এবার অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি জমে বন্যার সৃষ্টি করেছে। এ রকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য সিলেটের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নদী দখলমুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাত হলে যেন পানির বাড়তি চাপ ধারণ করতে পারে, এ জন্য বিল-ঝিল, হাওর-বাঁওড় ও জলাধার খনন করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ