নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে চাষ হচ্ছে আগাম তরমুজ। এই চরে অন্তত ১০০ একর জমিতে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম হওয়ায় আগাম তরমুজ চাষে লাখ টাকা আয় করছেন তারা।

কৃষকদের একজন বাচ্চু দফাদার এবার দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে এক একরে করেছেন আগাম জাতের তরমুজ। খেতে সেচ দিতে পাশেই মাটি খনন করে কুয়া তৈরি করে নিয়েছেন। বাচ্চু বলেন, সব মিলিয়ে এক একর জমিতে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তাঁর। এর মধ্যে তিনি এক লাখ টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করেছেন। আরও যে তরমুজ খেতে আছে, তাতে লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে।

পড়তে পারেন: কৃষকের ১০ হাজার তরমুজ গাছ উপড়ে ফেললেন পাউবো প্রকৌশলী

বাচ্চু আরও বলেন, ‘কৃষি কাম করে মোরা লাভের মুখ খুব কমই দেহি। চরের চাইরদিকে বান্দা না থাহনে বছরে একবার ধান আবাদ করতে পারি। রবি ফসল দেলেও জোয়ারে সব শ্যাষ করে দেয়। পেরতেক (প্রতি) বছর মৌসুমি তরমুজ আবাদ করি। কিন্তু ফল সব নুন পানিতে শ্যাষ করে দেয়। এই জন্য এইবার বুদ্ধি করে আগাম জাতের তরমুজ দিছি। খুব ভালো ফলন পাইছি। বড় সাইজের একটা তরমুজ পাইকারি ৩২০ আর ছোট সাইজের ২০০ টাহায় বিক্রি করছি। মৌসুমে এই তরমুজ ১০০ টাহায়ও বিক্রি অইতো না।’

চরটির আয়তন প্রায় ৬০০ একর। প্রায় সাড়ে তিন শ পরিবার এই চরে বসতি গড়েছে কয়েক যুগ আগে। চরের চারদিকে বাঁধ না থাকায় জোয়ারের উচ্চতা বাড়লেই নিমজ্জিত হয় ফসলি মাঠ, ঘরবাড়ি। এ কারণে প্রতিবছর কৃষিতে ধরা খেয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না চরবাসী। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কয়েকজন কৃষক এবার আবাদ করেন আগাম জাতের তরমুজ। তাতে মিলছে সাফল্য।

পড়তে পারেন: তরমুজ চাষ শুরু করবেন কিভাবে? জানুন চাষ পদ্ধতি

বরগুনা জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৩ হেক্টর। তা ছাপিয়ে আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩১২ হেক্টর জমিতে। বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক এস এম বদরুল আলম বলেন, মাঝের চরের কৃষকদের বুদ্ধিমত্তায় এবার তাঁরা আগাম তরমুজ আবাদ করে বেশ লাভবান।

চরের বাসিন্দা মাসুদ দফাদার বলেন, ‘আমাগো ফলন দেইখ্যা চরের সব চাষি এহন আগাম তরমুজ চাষে আগ্রহী। যে অবস্থা হ্যাতে আগামী বছর এই চরে ১০০ একরের বেশি জমিতে আগাম জাতের তরমুজ আবাদ অইবে।’

পড়তে পারেন: চারঘাটে জনপ্রিয় হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ুর অভিঘাতে উপকূলে লবণাক্ততা বাড়ছে, বাড়ছে প্লাবনভূমি। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে উপকূলের কৃষি উৎপাদনে। এই অবস্থা মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তি, খাপ খাওয়ানোর কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। কৃষকেরাই এই অভিযোজন কৌশল উদ্ভাবন করছেন। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।

বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিমুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। বরগুনা, পটুয়াখালী অঞ্চলে আগাম জাতের তরমুজ উৎপাদনে এগিয়ে এসেছেন কৃষকেরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ