ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এ মাসে আমন ধানের বীজতলা তৈরি নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কারো বীজতলা তৈরি হয়েছে কারো বিলম্ব হয়েছে। আমন ধানের বীজতলা তৈরি ও রোগবালাই দমন পদ্ধতি জানলে মিলবে শতভাগ সফলতা।

আমন চাষিদের জন্যে আমাদের এবারের আয়োজন আমন ধানের বীজতলা তৈরি, বপনের সময় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পরিবেশন।

বীজতলা তৈরি: উঁচু এবং উর্বর জমিতে বীজতলা তৈরী করতে হবে যেখানে বন্যার পানি উঠার সম্ভাবনা নেই। যেসব এলাকায় উঁচু জমি নেই সেসব এলাকায় ভাসমান বীজতলা তৈরী করার জন্য পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

দীর্ঘ, মধ্যম ও স্বল্প জীবনকালের জাতের জন্য আলাদা আলাদা স্থান ও সময়ে বীজতলায় বপন করতে হবে। পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে নিম্ন, অতি নিম্ন অথবা অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মণ হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে।

পড়তে পারেন: আমন ধান চাষে সার ও পরিচর্যা কৌশল

ভালো চারা পাওয়ার জন্য ভালো বীজের বিকল্প নেই। তাই বিএডিসি, স্থানীয় কৃষি বিভাগ বা ব্রি কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে ভালো বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় বপন করতে হবে।

আমন বীজতলায় রোগ ব্যবস্থাপনাআমন বীজতলায় বাকানি রোগ দেখা দিতে পারে। বাকানি রোগাক্রান্ত ধানের চারা স্বাভাবিক চারা হালকা সবুজ, লিকলিকে, ও স্বাভাবিক চারার চেয়ে অনেকটা লম্বা হয়ে অন্য চারার ওপরে ঢলে পড়ে। আক্রান্ত চারাগুলো  ক্রমান্বয়ে মারা যায়। আক্রান্ত চারার নিচের গিট থেকে অস্থানিক শিকড়ও দেখা যেতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনা: বাকানি রোগ দমনের জন্য অটোস্টিন ৫০ডব্লিউপি বা নোইন দ্বারা বীজ অথবা চারা শোধন করা (১ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম অটোস্টিন ৫০ডব্লিউপি বা নোইন মিশিয়ে তাতে ধানের বীজ অথবা চারা ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা)। আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে পুঁড়িয়ে ফেলতে হবে।  বীজতলা হিসেবে একই জমি ব্যবহার না করা।

চারা রোপন: লাইন বা সারিবদ্ধভাবে চারা রোপন করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও বাতাস চলাচলের জন্য উত্তর-দক্ষিণ বরাবর সারি করে লাগালে ভাল।

সাধারণত সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সে.মি. (৮ ইঞ্চি) ও গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি) রাখলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। তবে জমি ঊর্বর হলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সে.মি. (১০ ইঞ্চি) ও গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি) রাখা যেতে পারে।

পড়তে পারেন: আউষ আমন বোরো মৌসুমের ৬৮টি জাতের ধান সম্পর্কে জানুন

চারার বয়স: আলোক-অসংবেদনশীল দীর্ঘ ও মধ্যম মেয়াদি জাতগুলোর চারার বয়স হবে ২০-২৫ দিন। আলোক-অসংবেদনশীল স্বল্পমেয়াদি জাতগুলোর চারার বয়স হবে ১৫-২০ দিন।

লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতগুলোর (যেমনঃ ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩) চারার বয়স হবে ৩০-৩৫দিন। আলোক-সংবেদনশীল জাতগুলোর (যেমনঃ বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৭) নাবীতে রোপনের ক্ষেত্রে চারার বয়স হবে ৩৫-৪০দিন।

রোপন সময়: রোপা আমনের আলোক-অসংবেদনশীল দীর্ঘ ও মধ্যম মেয়াদি জাতগুলোর উপযুক্ত রোপন সময় হচ্ছে ১৫ জুলাই-১৫ আগস্ট। তাছাড়া প্রতিদিন বিলম্বের জন্য ফলন কমে যাবে।

আলোক-অসংবেদনশীল স্বল্প মেয়াদি জাতগুলোর উপযুক্ত রোপন সময় হচ্ছে ২৫জুলাই-২৫আগস্ট। এই সময়ের আগে লাগালে ইঁদুর ও পাখি আক্রমণ করে।

আলোক-সংবেদনশীল জাতগুলোর (বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৫৪, নাইজারশাইল) বপন সময় হলো ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এবং রোপন সময় হচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সকল সুগদ্ধি এবং স্থানীয় জাত ১-২০ভাদ্র সময়ের মধ্যে রোপন করতে হবে।

আমন ধানের বীজতলা তৈরি ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদের তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ