আব্দুল বাতেন, রাজশাহী  প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চাঁপাই নবাবগঞ্জ মহাসড়ক রাস্তার দুইপাশে আমের বাগান চোখে পড়ার মতো। কিছুদিন আগেই গাছগুলোতে ছেয়ে ছিলো আমের মুকুল আর মৌ মাছিরা পেয়েছিলো তাদের স্বর্গরাজ্য।

মধু আহরণে তাদের যেন এক মিলন মেলা ঘটেছিলো। আর এখন সেই মুকুল গাছে গুলোতে দানা বেঁধে আমের গুটি। চারিদিকে তাকালে চোখে পরবে গাছভর্তি আমের গুটির কলি আর আম।

গাছগুলোতে এবার এতোটা মুকুল এসেছে যে মুকুলের ভারেই যেন ডাল ভেঙে পড়ার অবস্থা। গুটির ভারে গাছ নুইয়ে পড়ছে। ছোট-মাঝারি এবং বড় সব ধরনের গাছে গাছে আমের গুটির সমারোহ।

এবার আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে থাকায় আমের বম্পানর ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আম ব্যবসায়ী ও চাষীরাও বেশ খুশিতেই আছে। এই অবস্থা শুধু গোদাগাড়ীতেই নয়, গোটা রাজশাহীতেই বিরাজ করছে। জেলা চারঘাট-বাঘা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, পবা, মোহনপুর, ও তানোর উপজেলার গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ধরে আছে মুকুল আর মুকুল।

চলতি বছর রাজশাহীতে আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে। যা এর আগে এতো পরিমাণ জমিতে আমচাষ কখনোই হয়নি। এ বছর ওই পরিমাণ জমি থেকে আম উৎপদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন।

রাজশাহীতে আমকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মৌসুম জুড়ে আম কেনা-বেচা, গাছ থেকে পাড়া, পরিচর্যা, পরিবহণসহ নানাকাজে যুক্ত থেকে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের।

বৈশাখের শুরুর দিকেই সেই আম উঠবে বাজারে। তখন থেকেই চাষিদের পকেটে ঢুকতে থাকবে টাকা।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, হেক্টর প্রতি গড়ে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন হারে আম উৎপাদন হবে বলেও এবারও আশা করা হচ্ছে। সেই হিসেবে এবার আমের উৎপাদন গতবারের চেয়ে অনেক বাড়বে।

যা হবে সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন। এবার গাছগুলোতে ব্যাপক পরিমাণ মুকুল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এবারও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ আম উৎপাদন হবে।

আম চাষিরা জানান, আমের রাজধানী রাজশাহীর গাছগুলো শুরুতেই যেন বাধভাঙা জোয়ারের মতো করে আসে মুকুল। গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখা দেয়। এবার আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। বছরের শেষ শীতের দিকেও এবার তেমন কুয়াশা দেখা যায়নি। ফলে এবার মুকুল ও আমের গুটিতে এখন পর্যন্ত তেমন ক্ষতি হয় নি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আম ব্যবাসায়ী মোঃ ইব্রাহীম বলেন, ‘রাজশাহীর সুস্বাদু আম সারাদেশজুড়েই ব্যাপক চাহিদা থাকে। ফলে এই আম ঘিরে রাজশাহীর চাষি ও আমবাগান মালিকরাও আশা-নিরাশার দোলাচলে ভোগেন।

যে বছর গাছে আম বেশি থাকে, দাম বেশি পাওয়া যায়, আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি থাকে। আবার যেবার গাছে আম কম থাকে, সেইবার চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও কিছুটা হতাশ হয়ে ওঠেন। তবে এবার আমের মুকুলের সময় পার হতে আমে গুটি গাছে গুলোতে এসেছে ব্যাপক হারে। আমগাছগুলোর পরিচর্যাও নেওয়া হচ্ছে। আশা করি এবার আমের ভালো ফলনই হবে।’

বাঘার হাবাসপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী ও চাষি আশরাফুল ইমলাম বলেন, ‘এবার আমগাছ যে পরিমাণে আমের গুটি এসেছে, তাতে মনে হচ্ছে বাম্পার ফলন হবে। এখন বাকি সময়টুকুতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দিলেই হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার প্রতিটি ৮-১০ বছর বয়সের ছোট আকারের একটি আম গাছেও অন্তত ২-৩ মণ আম আসবে। যা বিক্রি করে ভালো জাতের একটি আম গাছ থেকেই কমপক্ষে চার হাজার টাকার আম বিক্রি করা যাবে।

আর বড় গাছগুলোতে কমপক্ষে ৮ মণ করে আম আসবে। যা বিক্রি করে চাষিরা কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।’

আম চাষের যত্ন ও সংশ্লিষ্ট নিউজ পেতে আমাদের ফেসবুক পাতায় https://web.facebook.com/AgriCare24com-320632075085761/ লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন।