আম লিচুসহ মৌসুমী ফল-সবজি

আম লিচুসহ মৌসুমী ফল-সবজি বিপণনে করণীয় নির্ধারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশংসনীয় উদ্যোগ লিখেছেন কৃষিবিদ মো: হামিদুর hamid sirরহমান, সদস্য, এপিএ বিশেষজ্ঞ পুল, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সাবেক মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কোভিড-১৯ নামের করোনা ভাইরাসের সংক্রামণজনিত মহামারিতে কাঁপছে পৃথিবী। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। গত বছরের শেষে, ডিসেম্বর মাসে এ রোগের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় চীন দেশের উহান প্রদেশে।

তারপর বিগত পাঁচ মাসে এ মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে অন্তত ৩,২৫,৭১২ জন এবং আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে ৫০,১৯,৭০০ জন মানুষ, (২১ মে পর্যন্ত)।

মানব সভ্যতার এ মহাসংকটে দেশে দেশে ভেঙ্গে পড়েছে উৎপাদন ব্যবস্থা, মন্থর হয়েছে অর্থনীতির গতি- যার প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবন- জীবিকার উপর। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অভাব অনটন ও দুর্ভিক্ষের।

বাংলাদেশে এ মহামারীর সংক্রমণ শনাক্ত হয় বিগত মার্চ মাসের ৮ তারিখে। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে এ মহামারী বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে ২৬৭৩৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৮৬ জন (২১ পর্যন্ত)।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা রোধে বাংলাদেশ সরকার বিগত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপের প্রভাবে শিল্প-বাণিজ্য কৃষিসহ সকল আর্থিক খাতের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে- যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন- যাত্রার মানের উপর।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রার অন্যতম নিয়ন্ত্রক খাত হল কৃষি। করোনার প্রভাবে বৃহত্তর কৃষি তথা ফসল প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসহ সকল ক্ষেত্রেই উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রণোদনামূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এসব পদক্ষেপের মধ্যে ৫০০০ কোটি টাকা স্বল্প সুদে (৪%) উৎপাদন সহায়ক ঋণ প্রদান, ১৯৫০০ কোটি টাকা ভর্তূকী সহায়তার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখা, কৃষি পণ্যের ও উপকরণের পরিবহন ও বাজারজাতকরণ নির্বিঘ্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব উদ্যোগ যাতে মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করা হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহ নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দায়িত্বপালন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিকভাবে এসব কার্যক্রমে নির্দেশনা দিচ্ছেন ও নিরন্তর তদারকী করছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশংসনীয় উদ্যোগ:

করোনা ঘটিত মহামারীর চরম উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেও ফসল উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় নিরবচ্ছিন্নভাবে নানান বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে নিরলসভাবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কৃষি মন্ত্রীর সুদক্ষ কর্মতৎপরতা ফলে ইতোমধ্যেই দেশের প্রধান ফসল বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হাওড় অঞ্চলে দ্রæততার সাথে ধান সংগ্রহে কর্তন যন্ত্র ও কৃষি শ্রমিকের সময়োচিত যোগান নিশ্চিত করার নানান পদক্ষেপ দেশবাসির কাছে এমনকি উন্নয়ন সহযোগিদের কাছেও অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে মাননীয় কৃষি মন্ত্রী বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফল- আম, লিচুসহ প্রধান প্রধান ফল এবং সবজিসহ কৃষি পণ্য বিপণনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে লাভজনকভাবে এসব পণ্য বাজারজাতকরনের উদ্যোগ গ্রহণে তৎপর হয়েছেন।

এ কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে ১৬ মে শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কৃষি মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ও কৃষি সচিবের সঞ্ছালনায় বিবেচ্য বিষয়ে মূল্যবান মাতামত দিতে পারেন এমনসব ব্যক্তিবর্গের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতিতে ৩ ঘন্টাব্যাপী এক অনলাইন বৈঠকের আয়োজন করেন।

আম, লিচু ও সবজি উৎপাদন এলাকার মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য নীতি নির্ধারক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ, উৎপাদক, কৃষক, প্রক্রিয়াজাতকারী, আড়তদার, পরিবহন সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ ৯২ জন এ কনফারেন্সে যুক্ত হন।

আলোচনায় অংশ নেন প্রায় ৪০ জন যাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক কৃষি মন্ত্রী এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. রুহল হক এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহরিয়ার আলম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ জনাব ইকবালুর রহিম এমপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর জনাব মোঃ আতিউর রহমান, এফএও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রবার্ট সিম্পসন, এমিরেটাস প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জনাব শাইখ সিরাজ, কৃষক লীগের সভাপতি জনাব সমীর চন্দ্র চন্দ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম, জনাব শামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত সচিব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রাণ গ্রুপের আহসান চৌধুরী, ফল রপ্তানিকারক সমিতির পক্ষে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষক ময়েজ উদ্দিন, ফল ব্যবসায়ী সমিতি, ট্রাক ড্রাইভার সমিতির প্রতিনিধি প্রমুখ।

এ বৈঠক থেকে মৌসুমী ফল ও সবজি উৎপাদন ও বাজারজাত করনের ক্ষেত্রে ত্রুটি, দুর্বলতা ও বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং এসব ত্রুটি, দুর্বলতা ও বাধা অপসারণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

মৌসুমী ফল সবজি বিপণনে ত্রুটি দুর্বলতা বাধাসমূহ:

১.      করোনা পরিস্থিতির কারণে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া

২.       সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও কৃষি পণ্য সরবরাহ চেইনের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠান/ ব্যক্তির সংযোগ ছিন্ন হওয়া

৩.      অপরিকল্পিত চাষাবাদের ফলে এলাকা ভিত্তিতে একসাথে অনেক পণ্য বাজাওে উঠায় দাম কমে যাওয়া

৪.      পঁচনশীল পণ্যের উপযোগী পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা

৫.      পরিবহনকালীন হয়রানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি

৬.      বড় পাইকার বাজাওে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা স্বল্পতা

৭.       কৃষি পণ্যে বিশেষ করে ফলে ফরমালিন সংক্রান্ত ভীতির কারনে ভোক্তা পর্যায়ে ফল ক্রয়ে অনাগ্রহ

৮.     জনগনের মধ্যে ফল ও সবজি ভোগে পুষ্টি সচেতনতার অভাব

৯.      বিদেশী ফলের সাথে প্রতিযোগিতা

১০.    ফল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর পরিচর্যার মাধ্যমে সংরক্ষণকালের পরিধি বৃদ্ধি বিষয়ে সচেতনতার অভাব এবং প্রযুক্তি ও ভৌত সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতা

১১.    প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রমের অপর্যাপ্ততা

১২.    মূল্য সংযোজন কার্যক্রমের সীমিত চর্চা

১৩.   দেশের বাইরে কৃষি পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব

১৪.    উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী ও বাজারজাতকারীর জন্য পর্যাপ্ত ও নির্বিঘ্নে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগের অপ্রতুলতা

১৫.    রেলওয়ে ও নৌপথে পঁচনশীল কৃষি পণ্য পরিবহনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার অপ্রতুলতা

১৬.   উৎপাদিত পণ্যের ব্র্যান্ডিং বিষয়ক কার্যক্রমের অভাব

১৭.    পঁচনশীল কৃষি পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজতাকরণ ও বিপণনের সাথে সম্পর্কযুক্ত মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সাথে সমন্বয়ের ঘাটতি

১৮.   কৃষি পণ্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরনের সাথে যুক্ত জনবলের জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব

১৯.    বহির্বানিজ্যের ক্ষেত্রে লাগসই প্রযুক্তি চর্চা, ট্রেসেবিলিটি ও এক্রিডিটেশন চালু করার মাধ্যমে কমপ্লাইয়েন্স অনূসরণ কার্যক্রমের অপ্রতুলতা ইত্যাদি।

এসব ত্রুটি, দুর্বলতা ও বাধাসমূহ দূর করে আয় এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পরিধি বিস্তৃত করার জন্য এই অনলাইন বৈঠক থেকে বেশ কিছু সুচিন্তিত মতামত ও বাস্তবধর্মী সুপারিশ পাওয়া গেছে। সুপারিশ সমূহ হল:

এক) করোনাজনিত পরিস্থিতিতে মৌসুমী ফল ও সবজি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হলেও বাজারজাতকরণ ও লাভজনক মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে যাওয়া। লকডাউন পরিস্থিতির কারনে কেনা বেচার আড়ৎ সংকুচিত হয়েছে, পরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে এবং বাজারজাতকরনের সাথে সংশ্লিষ্ট জনবলের অংশগ্রহণ কমেছে। এই চেইন মেরামত করা অর্থাৎ চেইনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে।

দুই) পণ্যের সরবরাহ বেশী অথচ চাহিদা কম পরিস্থিতিজনিত ভীতি ও সাময়িক বেকারত্বের কারণে এমন পরিস্থিতির  উদ্ভব হওয়ায় গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো অর্থাৎ আয় বাড়ানোর জন্য অবিলম্বে কর্মসৃজনের উদ্দ্যোগ নিতে হবে।

তিন) বোরো ধানের উৎসাহব্যঞ্জক মূল্য নির্ধারণ করে তা প্রকৃত কৃষক হতে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চার) ফল ও সবজির পুষ্টিগুণ এবং প্রয়োজনীয় পরিমান প্রতিদিন খাওয়ার বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাঁচ) কৃষি পণ্য পরিবহণে যেসব বাধা বিপত্তি রয়েছে তা দূর করতে হবে। খালি ট্রাক ফেরার সময় টোল মওকুপের ব্যবস্থাসহ আর্থিক সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

ছয়) কৃষিপণ্য যেহেতু দ্রুত পঁচনশীল সেকারণে রেলওয়ে, জলপথ ও সড়ক পথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় পরিবহন করতে হবে।

সাত) কৃষিপণ্যের সংগ্রহোত্তর পরিচর্যা ও মানসম্মত প্যাকেজিং বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও উপকরণ ব্যবহার করে বিপুল সংগ্রহোত্তর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

আট) ইলেক্ট্রনিক বিপণন পদ্ধতি বা ই-কৃষি বিপণন ব্যবস্থার আরো প্রসার ঘটাতে হবে। ই-পণ্য ব্যবহারের যানবাহন চলাচলে বাধা দূর করতে হবে। পরিবহনের কাজে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সনদ প্রদান করতে হবে।

নয়) ফলের বাজার সম্প্রসারণ বা চাহিদা বৃদ্ধিও অন্যতম উপায় হিসেবে দেশে উৎপাদিত মৌসুমী ফলে যে ফরমালিন নামের কেমিক্যাল দেয়া হয় না তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে যাতে এক শ্রেণির ক্রেতার মনে “ফরমালিন” ভীতির যে ছায়া আছে তা দ্রুত দূর হয় এবং তারা বাজারের মৌসুমী ফল কিনতে উৎসাহিত হন।

দশ) ফলের বাজার সম্প্রসারণের জন্য- হাসপাতাল জেলখানা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ডরমেটরী বা ক্যাম্পে পুলিশ ও বিজেপি সদস্যদের মৌসুমী ফল সরবরাহের প্রথা চালু করা।

এগারো) জাতীয় ফল কাঁঠালের পুষ্টিগুণ এবং খাদ্য হিসেবে এর বিচিত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণে এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য বিপণনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বারো) ফল ও সবজির প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিবিড় উৎপাদন এলাকায় প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প- কারখানা স্থাপনে উদ্দ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে। প্রয়োজনে পাবলিক- প্রাইভেট পার্টনারশীপ করতে হবে। গ্রামীন নারীদের স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে সম্পৃক্ত করে ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশ ঘটাত হবে।

তেরো) ফলের বহির্বাণিজ্য সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক মানদন্ড, ট্রেসাবিলিটি ও এক্রিডিটেশন প্রথা প্রবর্তন করে ফল ও সবজির বিশাল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হবে।

চৌদ্দ) ফল ও সবজি পরিবহনের সাথে যুক্ত বেসরকারি যানবাহন (ট্রাক, মিনিট্রাক, ভ্যান ইত্যাদি) ও যানবাহনসমূহের চালকদেও পরিচয়পত্র দিতে হবে এবং ফিরতি খালি যানবাহনের টোল মৌকুফের ব্যবস্থা করতে হবে।

পনেরো) দেশী ফলের উৎপাদন মৌসুমে বিদেশ থেকে ফল আমদানি বন্ধ রাখতে হবে।

ষোল) ফল চাষীদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে এবং ফলচাষী ও ফল প্রক্রিয়াজাতকরণে যুক্ত উদ্যোক্তাদের ৪% সুদে কৃষি ঋণ সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

সতের) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে এবং জেলা শহরগুলোতে কৃষক চালিত কৃষি পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

অনলাইন বৈঠকের উল্লিখিত সুপারিশগুলির সমন্বয়্বে কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই ১০ দফা কার্যক্রম চিহ্নিত করেছে। এসব সুপারিশ করোনাকালিন স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার আওতায় এনে নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশের জনগনের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বলয় সম্প্রসারণে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে এবং সার্বিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনতে তা বিপুল অবদান রাখতে সহায়ক হবে।

আম লিচুসহ মৌসুমী ফল-সবজি বিপণনে করণীয় নির্ধারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশংসনীয় উদ্যোগ শিরোনামের তথ্যবহুল লেখার জন্যে লেখক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। উল্লেখ্য উনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সম্পাদক হিসেবেও দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।