এগ্রিকেয়ার ডেস্ক: “আলতু ফালতু গরু ছাগলের ডাক্তার, তারা গরু-ছাগল নিয়ে থাকবে, তারা ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কি বুঝবে” এমন কথা বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনারারি প্রফেসর নূরজাহান সরকারকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার বাঘের বাচ্চা নিয়ে সাক্ষাৎকারে সম্মানহানিকর বক্তব্য দেন এই শিক্ষক। গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিএ) মহাসচিব ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন এই নোটিশ প্রেরণ করেন।

নোটিশে আইনজীবী বলেছেন, আমার মক্কেল বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিএ) মহাসচিব ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার থেকে আদিষ্ট হয়ে নোটিশ গ্রহীতাকে (ঢাবি শিক্ষক নূরজাহান) জানাচ্ছি যে গত ২৬ নভেম্বর ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি বাঘশাবকের অসুস্থতাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের আলোচনায় আপনি নোটিশ গ্রহীতা চিড়িয়াখানায় কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের নিয়ে কটূক্তি করে বলেছেন, “আলতু ফালতু গরু ছাগলের ডাক্তার, তারা গরু-ছাগল নিয়ে থাকবে, তারা ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কি বুঝবে”। এর ফলে বাংলাদেশের রেজিস্ট্রিকৃত ৭ হাজার ৪৮৯ জন ভেটেরিনারিয়ানের মতো আমার মক্কেল (জহির উদ্দিন) একজন ভেটেরিনারিয়ান হওয়ায় তার ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও পেশাগত সম্মানহানি হয়েছে।

‘বাংলাদেশের সব ভেটেরিনারিয়ান দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরিনারি বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) কর্তৃক আইনসিদ্ধভাবে রেজিস্ট্রিকৃত হয়ে ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনার হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হন।’

‘কিন্তু আপনি (ঢাবি শিক্ষক নূরজাহান) গত ২৬ নভেম্বর চিড়িয়াখানায় বাঘশাবকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যে ধরনের সম্মানহানিকর, অশালীন বিদ্বেষপ্রসূত, কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছেন, তার জন্য বাংলাদেশের ভেটেরিনারিয়ানগন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, মনক্ষুণ্ন ও মর্মাহত।’

তাই নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিভিন্ন চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইউটিউব থেকে ওই সাক্ষাৎকারটি অপসারণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২১ নভেম্বর বাঘশাবকের মৃত্যু হলেও বিষয়টি গোপন রাখে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পরে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ জানান, গত ১৫ নভেম্বর বাঘের দুই শাবকের অসুস্থতা ধরা পড়ে। তারা পেছনের পা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। এ অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করে চিড়িয়াখানা মেডিকেল বোর্ড। রক্ত পরীক্ষায় তাদের মাছিবাহিত রক্তের পরজীবী ধরা পড়ে। সে অনুযায়ী চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঘশাবক দুটিকে বাঁচানো যায়নি।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেটসি ফ্লাই নামে এক ধরনের মাছির কামড়ে ট্রাইপেনোসোমা রোগে বাঘশাবকের মৃত্যু হয়। তবে এর খবর বা কোনও ছবি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। গবেষকরা বলছেন, অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা ও অযত্ন-অবহেলাই এই মৃত্যুর কারণ। এভাবে চললে চিড়িয়াখানায় কোনও বাঘশাবকই বাঁচানো যাবে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ