কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, বাকৃবি থেকে, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ৯ম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) স্বর্ণপদক ২০১৬  পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান। উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনায় অনবদ্য অবদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন তাকে ওই সম্মাননা প্রদান করে।

মঙ্গলবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ৯ম ‘ইউজিসি স্বর্নপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন স্বর্ণপদক-২০১৬ ও পঞ্চাশ হাজার টাকা সম্মানী গ্রহণ করেন তিনি।

তিনি তৃতীয় বারের মতো রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণ পদক গ্রহণ করলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ের ৩৫ জন শিক্ষককে (২০১৬ সালে ১৮জন ও ২০১৭ সালে ১৭ জন) এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটি থেকে বোরলগ ফেলোশীপ এবং ল্যাটিন আমেরিকা, জার্মানী, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পোষ্ট ডক্টরাল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার চুন বুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পি. এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আমেরিকার ইউনাইটেড ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এর আর্থিক সহযোগিতায় লন্ডন ও দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ব্রুসেলোসিস কনফারেন্স এ অংশ গ্রহণ ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের সুযোগ পান তিনি।

 তিনি আমেরিকার ডির্পাটমেন্ট অব স্টেট এর আর্থিক সহযোগিতায় আমেরিকার ভার্জিনিয়া ম্যারিল্যান্ড রিজিওনাল কলেজ অব ভেটেরিনারী মেডিসিন ও কেনটাকী বিশ^বিদ্যালয়ে অবস্থান ও প্রশিক্ষন গ্রহণ, ম্যানিয়া পলিশ শহওে অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড ষ্টেট এনিমেল হেলথ এসোসিয়েশনের ১১৪ তম বার্ষিকসভা ও আমেরিকা এসোসিয়েশন অব ভেটেরিনারী ল্যাবরেটরী ডায়াগনষ্টিক এসোসিয়েশনের ৫৩ তম বার্ষিক সভা, শিকাগো শহওে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স অব রিসার্চ ওয়ার্কার ইন এনিমেল ডিজিজেস ২০০৯ ও ৬২ তম ব্রুসেলোসিস বার্ষিক সভায় অংশগ্রহন ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান দক্ষিণ কোরিয়ার চুনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মেডিকেল স্কুল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশীপ রিসার্চ কোর্স ও বাংলাদেশ কৃষিবিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে ডি.ভি.এম (ডক্টরঅব ভেটেরিনারি মেডিসিন) ও এম.এস. ডিগ্রী সম্পন্ন করেছিলেন।

তিনি ১৯৯৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের লেকচারার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ড. রহমান ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৮ সালে যথাক্রমে সহকারী প্রফেসর, সহযোগী প্রফেসর ও প্রফেসর পদে উন্নীত হন। এছাড়াও তিনি দুইবার মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও বোর্ড অব স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান ও ভেটেরিনারী টিচিং হসপিটালের পরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সদস্য, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ ও ইশা খাঁ হলের হাউজ টিউটর জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ৪৩ জন এম.এস. ছাত্র-ছাত্রী ও ৭ জন পি.এইচ.ডি ছাত্র-ছাত্রীসহ মোট ৫০ জনছাত্র-ছাত্রীর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ১৯টি সায়েন্টিফিক বই, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক জার্নালে ১১৯ টি গবেষণা প্রবন্ধ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এ ৯৩ টি প্রসেডিংস ও ৫৩ টি পপুলার আর্টিকেলসহ মোট ২৮৪ টি প্রকাশনার লেখক। সুদীর্ঘ ২৩ বছওে তিনি ২০ বার মোট ১০ টি দেশে-ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিংগাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, জার্মানী, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন কনফারেন্স ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন।

এছাড়াও তার সাফলতায় রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুদান ও বেষ্ট পাবলিকেশন এওয়ার্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুদান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুদান ও ফেলোশীপ, বিশ^বিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন গবেষণা অনুদান, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুদান, চুনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্কলারশীপ, জাপান সোসাইটি ফর প্রোমশন অব সায়েন্স এর ফেলোশীপ, জাপানের শিক্ষা, কালচার, স্পোর্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের ট্রেনিংগ্রান্ট, কোরিয়া সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের ফেলোশীপ, কোরিয়ার খাদ্য, কৃষি, ফরেস্ট ও ফিশারীজ মন্ত্রনালয়ের ফেলোশীপ, জার্মানীর ড্যাড ফেলোশীপ, বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থার ট্রেনিংগ্রান্ট, পাকিস্তান উচ্চ শিক্ষা কমিশনের গ্রান্ট, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন ও রিসার্চ ট্রেনিং গ্রান্ট, ব্রাজিলিয়ান ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল ফেলোশীপ, ওর্য়াল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়ুথ স্কলারশিপ, নোটারি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশীপ, কাজী জেবুন্নেসা ও মাহবুব উল্লাহ ট্রাস্ট স্কলারশীপসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য সম্মাননা ও গবেষণা অনুদান।

তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলাধীন ভাটিয়া পাড়া রবরাশুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাটিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ ও সরকারী বি.এল বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, খুলনা এর কৃতী শিক্ষার্থী ছিলেন।

তিনি তার পিতা মাতার ১১ সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ এবং তার সহধর্মিনী ময়মনসিংহের ইশ^রগঞ্জ সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রধান। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।