মেহেদী হাসান, (নওগাঁ থেকে ফিরে): রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভেয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইসতেয়াক আহম্মেদ ইমন। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁকে থাকতে হয় বাড়িতে। কিন্তু বসে তো আর থাকা যায় না, ইউটিউবে দেখে চাষ করলেন গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের হলুদ তরমুজ। ভাগ্যও সহায় হলো, লুফে নিলেন মুনাফা।

নওগাঁর মান্দা উপজেলা ভারশোঁ ইউনিয়ানের পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ইমন। চুয়াডাঙ্গা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এ বারমাসি তরমুজের বীজ। এরপর পৈত্রিক ৩৩ শতক জমিতে গোল্ডেন ক্রাউন ও ১৭ শতক জমিতে ব্ল্যাক বেবি ফল চাষ করেন।

ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে বীজ বপন করেন এবং মার্চ মাসের শেষের দিকে গাছে ফুল ও ফল দেখা দেয়। সখ্যতা থাকায় সার্বিক পরামর্শ দেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবাযের মাসরু। আরোও সহযোগিতা করেন তাঁর চাচা আলম উদ্দিন ও স্থানীয় কীটনাশক ডিলার দুলাল হোসেন।

গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে এ তরমুজ চাষ হচ্ছে। মাচায় ঝুলছে হলুদ তরমুজ। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, শুধু হলুদ তরমুজ ঝুলতে দেখা গেছে। ইমন তরমুজগাছের পরিচর্যা করছিলেন।

কথা হয় ইমনের সাথে; তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এই ৫০ শতক জমিতে চাষ করতে তার প্রায় এক লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এই চাষ করা ফল বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক হারে চাষ করা হলে আরো লাভ হবে। ফল চাষের জমি উর্বর করতে গোবর, কিছু পরিমাণে ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, দানাদার ব্যবহার করেছি। পোকা দমন করতে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ফেরোমন ফাঁদ বেশ কাজে দিয়েছে।

তিনি জানান, গোল্ডেন ক্রাউন এবং ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গোল্ডেন ক্রাউন ফল ওজনে তিন থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয় এবং ব্ল্যাকবেবি ফল দুই থেকে চার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। লোকজন কিনতে আসলেও ফল পরিপূর্ণ না হওয়ার কারণে বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। ৭ দিনের মধ্যে ফল বাজারজাত শুরু করতে পারবেন। বাজারে প্রতিটি ফল ৫০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হলে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

হটাৎ কেন এমন চাষের দিকে ঝুঁকেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর দেশ। তাই কৃষিকে আমাদের প্রধান প্রাধান্য হিসেবে দেওয়া উচিত। তাই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষি উপর মনোনিবেশ করি, কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার শায়লা শারমিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদ কৃষকরা করতে চাইলে খুব ভালো। এবার তরমুজের বেশ ভালো দাম রয়েছে। যারা তরমুজ চাষ করেছে কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।