নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশীয় ইলিশের জীবনরহস্য প্রস্তুতকরণ, জিনোমিক ডাটাবেজ-স্থাপনেও গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা।

ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচন সংক্রান্ত গবেষণা কর্মশালায় গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বলেন যে, বিশ্বে নিজস্ব মেধা ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ইলিশমাছের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়েছেন।

বছরে দুইবার ইলিশ প্রজনন হয় বলে তারা দাবি করে বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জীনগতভাবে পৃথক কিনা এবং কোনো নির্দিষ্ট নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতেই ফিরে আসে কিনা সেসব তথ্যও জানা যাবে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচনসংক্রান্ত’ গবেষণা কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়ন ও অনুপ্রাণ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড হাসিনা খান পৃথক পৃথক প্রবন্ধে এসব তথ্য প্রকাশ করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ইলিশের জীবনরহস্যসংক্রান্ত গবেষণার অগ্রগতি ও ফলাফল সম্পর্কে অবহিত হতে আগ্রহ প্রকাশ করায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানান, জিনোম হচ্ছে কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াসহ সকল জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় জিনোমদ্বারা।

ইলিশের জিনোমে ৭৬ কোটি ৮০ লাখ নিউক্লিওটাইড রয়েছে যা মানুষের জিনোমের প্রায় একচতুর্থাংশ। ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে অসংখ্য অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে খুব সহজেই।

বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশের স্টকের সংখ্যা (একটি এলাকায় মাছের বিস্তৃতির পরিসীমা) কতটি এবং দেশের পদ্মা, মেঘনা দীর মোহনায় প্রজননকারী ইলিশগুলো ভিন্নভিন্ন স্টক কিনা তা জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সর মাধ্যমে।

বক্তারা, জাতীয় মাছ ইলিশসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও টেকসই আহরণ নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ইলিশ এখন বিশ্বে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। তাই দেশীয় ইলিশের জীবনরহস্য প্রস্তুতকরণ, জিনোমিক ডাটাবেজ স্থাপনে গবেষণায় সাফল্য পাওয়ায় ইলিশের ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

গবেষকরা জানান, তারা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বলী প্রস্তুত করে ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তর্জাতিক জিনোম ডেটাবেজ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে’ (NCBI) জমা দেন। ইলিশের জিনোমসংক্রান্ত গবেষণালব্ধ ফলাফল একাধিক আর্ন্তজাতিক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব রইছ উল আলম মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সাঈদ মোঃ রাশেদুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড ইয়াহিয়া মাহমুদ, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মঞ্জুরুল আলম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কাদের খান, পোল্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম।

মন্ত্রী দেশের স্বার্থে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সমন্বিত গবেষনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এককভাবে সর্বাধিক অবদান রাখছে জাতীয় মাছ ইলিশ। একক প্রজাতি হিসাবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ, মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২% আসে ইলিশ থেকে। তিনি ইলিশের উন্নয়নে গবেষণা ত্বরান্বিত করতে আহবান  জানান।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো শাহ আলম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।