দেশে ১ আগষ্ট ঈদুল

এগ্রিকেয়ার২৪.কম ডেস্ক: বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা কবে উদযাপিত হবে, তা জানা যাবে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায়।

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে মধ্যপ্রাচ্যে। সেই অনুযায়ী সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে আগামী ৯ জুলাই।

এদিন ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণ ও হিজরি ১৪৪৩ সনের পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনার জন্য জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে।

বুধবার (২৯ জুন) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন বলেন, ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই সভায় চাঁদ দেখার খবর পর্যালোচনা করে ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণ করবে কমিটি।

বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেলে টেলিফোনে ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২,
০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭ ও ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ নম্বরে ফ্যাক্স করে জানাতে অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

কুরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া ও পদ্ধতি

সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে জানা দরকার। আসুন জেনে নিই কুরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া ও পদ্ধতি।

সহিহ মুসলিমে (১৯৬৭) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি লম্বা শিংওয়ালা দুম্বা আনার নির্দেশ দিলেন। কোরবানী করার জন্য দুম্বাটি আনা হল। তখন তিনি আয়েশাকে বললেন: আয়েশা, ছুরিটি নিয়ে আস। এরপর বললেন: পাথর দিয়ে ছুরিটি ধার দাও। আয়েশা ধার দিলেন। এরপর তিনি ছুরিটি নিলেন এবং দুম্বাটিকে ধরে শোয়ালেন। এরপর ‘বিস্‌মিল্লাহ্‌; আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন মুহাম্মদ, ওয়া আলে মুহাম্মদ, ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মদ’ বলে পশুটিকে জবাই্ করা শুরু করলেন এবং কোরবানী দিলেন”।

ইমাম তিরমিযি (১৫২১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। তিনি খোতবা শেষ করে মিম্বর থেকে নেমে আসলেন। এরপর দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে পশুটিকে জবাই্ করলেন। তিনি বললেন: বিসমিল্লাহ্‌, ওয়া আল্লাহু আকবার, হাযা আন্নি ওয়া আম্মান লাম ইউযাহ্‌হি মিন উম্মাতি’ (অর্থ- আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি। আল্লাহ্‌ই মহান। এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্যে যারা কোরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে)।[আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

কোন কোন রেওয়ায়েতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়া লাকা’ (হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনারই জন্য) অতিরিক্ত এসেছে।[দেখুন: ইরওয়াউল গালিল (১১৩৮ ও ১১৫২)]

“আল্লাহুম্মা মিনকা” (অর্থ- হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে): এ কথার অর্থ হচ্ছে এ কোরবানীর পশুটি আপনারই দান। এ রিযিক আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে।

“ওয়া লাক” (অর্থ- আপনার জন্য): এ কথার অর্থ হচ্ছে- এটি একনিষ্ঠভাবে আপনারই জন্য।[দেখুন: ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৪৯২)]

কুরবানির পশু জবেহ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি। তবে পশু জবেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য এ দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলেই কুরবানির পশু জবেহ হয়ে যাবে। কুরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। তাহলো-

– জবেহ করার সময় ‘بِسْمِ الله:বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করার জন্য ছুরি চালানো শুরু করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবেহ করা না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা।

– জবেহ করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী আর দুই পাশে থাকা দুটি নালী কেটে দেয়া। এ নালীগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

উল্লেখিত দুটি বিষয় খেয়াল রেখে যে কেউ তার নিজ নিজ পশু কুরবানি করতে পারেন। অর্থাৎ কুরবানির সময় আল্লাহর নামে তথা বিসমিল্লাহ বলে পশু খাদ্যনালী, শ্বাসনালী ও দুই পাশে দু’টি নালী জবেহ করা। তবেই কুরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। পশু জবেহ করার সময় আরও যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-

– পশু জবেহ করার ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় পশুর কষ্ট না হয়। অনেকে একটি ছুরি দিয়ে একাধিক পশু কুরবানি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে শেষ দিকে ছুরির ধার কমে যায়। সেক্ষেত্রে ছুরিতে ধার দিয়ে নেয়া। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পশু জবেহ করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেয়া।’ (মুসলিম)

– অন্য পশুর সামনে জবেহ না করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এতে পশুকে কষ্ট দেয়ার শামিল।

– কুরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়ানো। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।

কুরবানির দোয়া

কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। এ দোয়াটি বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কুরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে।

দোয়াটি হলো-

اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

– যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-

بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

– নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’

– অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি করলে এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’

লক্ষ্যণীয় হলো-

যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কুরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত নিয়মে কুরবানির পশু জবেহ করার তাওফিক দান করন। সবার কুরবানিকে কবুল করুন। আমিন। কুরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া ও পদ্ধতি শিরোনামে সংবাদের তথ্য ইসলামি ইনফো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ