উত্তারাঞ্চলে জমি চাষের ট্রাক্টর

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সরকারের কৃষিমন্ত্রী বারবার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের কথা বলছেন। কৃষকদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি মোটা অঙ্কের প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা আসছে। অথচ উত্তারাঞ্চলে জমি চাষের ট্রাক্টর চালকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর ফলে কমে যাচ্ছে ট্রাক্টর ব্যবহার।

এ অবস্থায় দ্রুত সমাধান চান কৃষক, ট্রাক্টর চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। উত্তারাঞ্চলের জেলা রংপুরের পিরগঞ্জের ট্রাক্টর চালক রিয়াজ (ছদ্মনাম) নিজের জমি ছাড়াও তার গ্রামের অন্যদের জমি চাষ করে থাকেন ট্রাক্টর দিয়ে।

তিনি জানান, জমি চাষের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের কাজও করে থাকেন ট্রাক্টর দিয়ে। মাঝে মধ্যে তেল নিতে জেলা সদরের সড়ক পার হতে গেলে বিভিন্ন সময়ে হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে। উচ্চ অংকের চাঁদা দাবি করা হয় তার কাছ থেকে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

একই অবস্থা গাইবান্ধা সদরের আনসার আলী (ছদ্মনাম) নামের একজন ট্রাক্টর চালকের। গত কয়েক মাস ধরেই তিনিও নানান সময়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অথচ তাদের আশে পাশের গ্রামে জমি চাষে ট্রাক্টর প্রয়োজন।

এদিকে এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেকেই ট্রাক্টর কিনতে চাইলেও হয়রানির কারনে কিনতে আগ্রহী হারিয়ে ফেলছেন। এরফলে জমি চাষে প্রথাগতভাবেই হালের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে ট্রাক্টর প্রয়োজন হলেও কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা। প্রতি বছর সাড়ে তিন-চার হাজার ট্রাক্টর বিক্রি হয় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। কিন্তু নেতিবাচক এ প্রভাবে এ অঞ্চলে ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলাতেই বিক্রি নেই বললেই চলে।

এছাড়া গত মাসে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ক্ষেতলাল উপজেলার মালন্দ এলাকায় ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার মানিকপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হুদা বকুল ও রিপন হোসেনের ট্রাক্টরটি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। এখন এ এলাকার কৃষকেরা ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও শতভাগ যান্ত্রিকীকরনের আওতায় আসেনি জমি চাষ। তাই চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো ও মাটির গুনাগুন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাক্টর।

তাছাড়া শ্রমিক সংকট মেটাতেও কার্যকর ভূমিকা রয়েছে যন্ত্রটি। জমি তৈরি ছাড়াও কৃষি পন্য পরিবহন ও বহুমূখী ব্যবহারে কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে ট্রাক্টর। কিন্তু কৃষকের এ ধরনের আতঙ্গে ট্রাক্টর ব্যবহার অকেনটাই বন্ধের উপক্রম।

এ বিষয়ে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এ তিন মাসই হলো ট্রাক্টর বিক্রির উপযুক্ত মৌসুম। সারা দেশেই এখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।

উত্তরবঙ্গে কৃষকের সঙ্গে চলমান ঘটনায় এক ধরনের ভিতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ট্রাক্টর চালানোর ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে তা সময় দিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে।

চালকদের লাইসেন্সিং করা এবং গাড়ীগুলোকে রেজিষ্ট্রেশন করার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে কৃষকের মনে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে যান্ত্রিকীকরন বাধাগ্রস্থ হতে পারে। কৃষি খাত বিপাকে পড়তে পারে।

এগ্রিকালচারাল ট্রাক্টর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক্টর কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। চলতি বছরে নতুন অনুষঙ্গ উত্তরাঞ্চলে ভীতিকর পরিবেশ।

গত কয়েক মাস ধরেই চলতে দেওয়া হচ্ছে না ট্রাক্টর। ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেবার ঘটনা, তেলের পাম্প থেকে তেল নিতে গেলে কিংবা কোনভাবে সড়কে উঠলে আটক করা হচ্ছে ট্রাক্টর। পাশাপাশি মোট অঙ্কের চাদা দাবি করা হচ্ছে।

বিক্রি বন্ধ থাকলে সরকারের যান্ত্রিকীকরনে চলমান ভর্তূতি কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হবে। তাই ট্রাক্টর মালিকদের এক বছরের মধ্যে ট্রাক্টরগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা যেতে পারে। কিভাবে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের আরো সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে ট্রাক্টর পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতীয় মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের বাজারে ট্রাক্টর সংযোজন, আমদানি ও বিপনন করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে, এসিআই মোটরসের সোনালিকা, র‌্যানকন ও কর্ণফূলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড, ইফাদ অটোসের এসকর্ট ও এনার্জিপ্যাকের জন ডিয়ার ব্রান্ডের ট্রাক্টর বাজারে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উত্তারাঞ্চলে জমি চাষের ট্রাক্টর চালকদের হয়রানি, কমছে ব্যবহার এতে ব্যাপক প্রভাব পরবে কৃষিখাতে। তাই দ্রুত এর সমাধান হওয়া জরুরি।