নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন,  ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বিষ্ময়কর উত্থান হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অনেক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে। মানব সম্পদ উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা তিনটি সূচকে তাদের থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।

মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটরিয়ামে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষির প্রতি সেক্টরে আমাদের ঈর্ষনীয় সাফল্য এসেছে। স্বাধীনতার পর ৩৪৮ মিলিয়ন ডলারের মাত্র  তিনটি কৃষি পন্য পাট, চা ও চামড়া রপ্তানি হতো। বর্তমানে কৃষি পন্যের সংখ্যা ও রপ্তানি আয়ের পরিমান কয়েকগুন বেড়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তিতে রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের  ক্রমাগত সমর্থনে কৃষির সকল ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। খাদ্য শস্যের ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যনীয়। ১৯৭২ সালে এ দেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ছিলো এক কোটি টন। বর্তমান তা বেড়ে দাড়িয়েছে  চার কোটি টনেরও উপরে।

বিবিএস এর উদ্বৃতি দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বড় তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাড়িয়েছে ২.৯৭ শতাংশে। ১৯৯১ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিলো ৫৬.৭ শতাংশ। বর্তমানে এ হার দাড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশে।

সরকার রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত রাখা, দুষনমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দেশের পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার লক্ষ্যে সমন্বিত প্রয়াস অব্যাহত রাখার আহবান জানান কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ঘোষনা দিয়েছিলেন ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা সে লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো: নাসিরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় নেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক।

সেমিনারের আগে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি আ.কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে তিন দিনের খাদ্য মেলা উদ্বোধন করেন। সকালে বিশ্ব খাদ্য দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে শুরু হয়ে মেলা চত্বরে শেষ হয়।

এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কর্ম গড়ে ভবিষ্যৎ, কর্মই গড়বে ২০৩০-এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

খাদ্য মেলায় সরকারি ও বেসরকারি ৪০ টি প্রতিষ্ঠানের মোট স্টলের সংখ্যা ৬৩টি। মেলা প্রতিদিন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দিবসটি  উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি গুরুত্বের  সাথে পালিত হয়ে আসছে।