রাজশাহী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে কচু চাষে  সফলতা পেয়েছেন। দাম ভাল থাকায় লাভবান হচ্ছেন কচুচাষিরা। মাঠে কচুকন্দ তুলতে ব্যস্ত চাষিরা।

মুখিকচু হিসেবে পরিচিত স্থানীয়ভাবে লতিরাজ জাতের কচু অনেকের কাছেই প্রিয় সবজি হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধি ও ভাল বাজারমূল্য পাওয়ায় বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র এলাকাসহ রাজশাহী অঞ্চলের কচুচাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। গতবারের লোকসানও পুষিয়ে যাচ্ছে এবার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় উপযুক্ত ভূমি, উপকূল আবহাওয়া ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় কচুর চাষ ভাল হয়েছে। শ্রমিক, যত্ন ও চাষাবাদে স্বল্প ব্যয় হওয়ায় অনেক কৃষক কচুচাষকে বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণ করেছেন অনেকে।

পবা উপজেলার ভবানীপুরের কচু চাষীরা জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে লতিরাজ জাতের কচু পাওয়া যায়। এই কচু চাষ মধ্য এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে মধ্য ডিসেম্বর ৮ মাস পর্যন্ত চলে। প্রতি বিঘা জমি হতে ৮০ থেকে একশো মণ পর্যন্ত কচু উৎপাদন হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় চারশ’ হেক্টরেরও বেশি জমিতে মুখি কচু ও দেড়শ’হেক্টরের বেশি জমিতে পানি কচুর চাষ হয়েছে।

তবে গত বছর কচুতে লোকসান হওয়ায় এবারে কিছুটা কম জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলার দূর্গাপুর ও বাঘা উপজেলায় কচুর আবাদ বেশী হয়। দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের এক কৃষক জানান, তিনি ২ বিঘা উঁচু জমিতে মুখি জাতের কচু চাষ করেছেন এবং এতে তিনি বাম্পার ফলনের আশা করছেন। জানুয়ারির ৩য় সপ্তাহে মুখির আবাদ করেন এবং জুলাইয়ের ৩য় সপ্তাহ থেকে মুখি উত্তোলন শুরু করেন।

জেলার পবা উপজেলার পারিলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মোতালেব বলেন, চলতি মৌসুমে মুখি কচু চাষ করে ভাল আয় করেছেন। তিনি জানান, একজন কৃষক প্রতি শতাংশ জমি থেকে ২/৩ মণ করে মুখি কচু পেতে পারেন।

বর্তমানে স্থানীয় বাজারে লতিরাজ কচুকন্দ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং দুই/তিন মাস পর এই দাম দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যান্য সবজির চেয়ে কচুর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর চাহিদাও বাড়ছে। এতে কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। গরু কচু গাছ খায় না এবং তা দেখাশোনার জন্য কোন শ্রমিকেরও প্রয়োজন হয় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দুলাল ঢালী জানায়, কচু পরিবেশ-বান্ধব, বিষমুক্ত ও পুষ্টিকর শস্য। কৃষি বিভাগ কৃষকদের উচ্চ ফলনজাতের কচু চাষের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে।

তিনি জানান, কৃষকরা এ অঞ্চলে সাদা ও লাল রংয়ের কচুসহ বিভিন্ন জাতের কচুর চাষ করেন। প্রায় সব জাতের কচুই পানিমগ্ন এলাকায় জন্মে থাকে। ধান চাষের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা লতিরাজ জাতের কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কচু চাষে খুব অল্প পরিচর্যা লাগে। তাই এর চাষে ঝুঁকিও কম।