ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: ধান কাটা মাড়াইয়ের সুবিধার জন্য নওগাঁয় কৃষকের মাঝে সরকারি প্রণোদনায় এসিআই কোম্পানীর কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটা মেশিন) প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমানে হারভেস্টার কিনে  বিপাকে কৃষকরা।

এসিআই কোম্পানীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি ও হয়রানীর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী কৃষকরা। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিকল হয়ে যাওয়া, সময়মতো বাজারে যন্ত্রাংশ না পাওয়া, যন্ত্রাংশ পাওয়া গেলেও বাজারের তুলনায় দাম বেশি এবং মেরামতে বিলম্ব হওয়ায় এসিআই কোম্পানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের।

মঙ্গলবার (২২ জুন ২০২১) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনে বাংলাদেশ হারভেস্টার মালিক সমিতির জেলা শাখা এ মানববন্ধ কর্মসূচী পালন করে। বাংলাদেশ হারভেস্টার মালিক সমিতির জেলা শাখার সভাপতি সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ইব্রাহিম হোসেন এর সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে হারভেস্টার মালিকরা অংশ নেয়।

জানাগেছে, গত বছরের মাঝামাঝি এবং চলতি বছরের শুরুতে জেলার ৫৭ জন কৃষকের মাঝে এসিআই কোম্পানীর ২৮ লক্ষ টাকা মূল্যের কম্বাইন হারভেস্টার সরকারি প্রনোদনায় অর্ধেক দামে দেওয়া হয়। কৃষকদের মাঝে কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়ার সময় কোম্পানির তরফ থেকে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার বিন্দুমাত্র পুরন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।

তারমধ্যে- দুই বছরের ফ্রি সার্ভিস প্রদানের কথা থাকলেও ৬০০ ঘন্টা পূর্ন নির্ধারন করা হয়। যা ছয়মাসের মধ্যে ৬০০ ঘন্টা হয়ে যায়। টেকসই মানের খুচরা যন্ত্রাংশ যেমন বেল্ট সমূহ, কাটিং বেল্ট ইউনিট, নাট বোল্ট প্রতিনিয়ত ভেঙে গেলেও কোম্পানি সঠিক সময়ে সরবরাহে ব্যর্থ হয়। মাঠে হারভেস্টার মেশিন চলাকালিন স্বল্প সময়ে দক্ষ কারিগর দ্বারা মেমরাত করার সহযোগীতা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। এসব কারণে মালিকগণ আশানুরুপ অর্থ উপার্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকরণে করার লক্ষে যে মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সে উদ্যেশ্য ব্যহৃত হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

জেলার পোরশা উপজেলার আব্দুস সালাম সরদার বলেন, ভূর্তুতির আওতায় একটি কম্বাইন হারভেস্টার কিনেছিলাম। মেশিনটি নেওয়ার সময় কোম্পানির মাঠকর্মীরা বলেছিল কাঁদামাটির মধ্যে পড়ে থাকাও কাটা যাবে। লাভবান হতে পারবেন। দুই বছরের ওয়ারেন্টিসহ যে কোন সময় নষ্ট হলে ফ্রি সার্ভিসসহ ওই যন্ত্রাংশ দেওয়া কথা। কিন্তু কোন কিছুই দেওয়া হয়নি। ধান কাটার সময় তিনমাসের মধ্যে একটি ব্লেড ভেঙে যায়। বগুড়াসহ আশপাশের জেলায় না পেয়ে ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। ১২ হাজার টাকা দামের ব্লেড ২৪ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। এছাড়া পাঁচদিন বসে থাকতে হয়েছে। একদিকে যেমন খরচ বেশি পড়লো অপরদিকে ধান কাটার সময়ও শেষ হয়ে গেল। মোট কথায় অনেক ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়তে হয়েছে।

নজিপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, হারভেস্টার মেশিনের কোন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে টেকনিশিয়ানরা সময় মতো আসে না। টেকনিশিয়ানরা নিজেরাই অদক্ষ। ধান কাটতে গিয়ে যদি প্রায় মেশিন নষ্ট হয় তাহলে কিভাবে আমরা কাজ করতে পারবো। চাকার বিয়ারিং, হাড্রোলিকের বিয়ারিং নষ্ট হলেও পার্টস পাওয়া যায় না। যদিও পার্টস পাওয়া যায় দামও বেশি নেয়। মেশিন নেওয়ার সময় কৃষকদের ভূল বুঝিয়ে ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে কোম্পানির লোকজন ফাঁকা চেক নিয়ে হারভেস্টার সরবরাহ করে। এখন তারা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মেশিনটি তাদের নিয়ন্ত্রনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের কাছে আবেদন বিষয়টি যেন তিনি সুনজরে দেখেন।

নওগাঁ এসিআইয়ের টেকনিশিয়ান আবু তালেব বলেন, প্রত্যেকটা কোম্পানির একই অবস্থা পার্টস সহজেই পাওয়া যায় না। ঠিক আমাদের কোম্পানির ক্ষেত্রেও তাই। শুধু কম্বাইন হারভেস্টারের ক্ষেত্রে না, পাওয়ার টিলারের ক্ষেত্রে পার্টস সহজেই পাওয়া যায়না। বাজারে কম্বাইন হারভেস্টার সম্পূর্ন নতুন। চালকরা ঠিকমতো পরিচালনা না করায় অনেক সময় মেশিনটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচারল সামশুল ওয়াদুদ বলেন, হারভেস্টারের কিছু সমস্যা ছিল। যা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ