মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করলার মাছি পোকা ও পামকিন বিটল পোকা করলার চাষ ব্যহত করে। ফল ছিদ্র ও পচন ধরে ফল অনুপযোগী করে তোলে। ফলে লোকসান গুণতে হয় চাষিদের। আসুন জেনে নিই করলার মাছি পোকা ও পামকিন বিটল পোকা দমন পদ্ধতি:-

করলার মাছি পোকা
লক্ষণঃ স্ত্রী মাছি কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মত তরল পদার্থ বেড়িয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামী রং ধারন করে । ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাস খেতে শুরু করে এবং ফল হলুদ হয়ে পঁচে ঝড়ে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ
১. আক্রান্ত ফল বা ফুল সংগ্রহ করে ধ্বংস করা বা পুড়ে ফেলা।
২. উত্তমরুপে জমি চাষ দিয়ে পোকার পুত্তলি পাখিদের খাবার সুযোগ করে দিন।
৩. ক্ষেতের মাঝে মাঝে কাঁঠালের মোথা দেয়া, এতে করলার পরিবর্তে স্ত্রী মাছি কাঁঠালের মোথায় ডিম পাড়বে এবং ক্ষতির পরিমান কমে আসবে।
৪. প্রথম ফুল আসা মাত্র ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা। প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৩ টি হারে ।
৫. আম বা খেজুরের রসে সামান্য বিষ মিশিয়ে তা বোতলে রেখে জানালা কেটে দিয়ে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
৬. পাকা মিষ্টি কুমড়া বা কুমড়া জাতীয় ফল ১০০ গ্রাম কুচি কুচি করে কেটে তাতে সামান্য বিষ ( যেমন- সপসিন ০.২৫ গ্রাম ) মিশিয়ে তা দিয়ে বিষটোপ তৈরী করে মাটির পাত্রে করে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
৭. সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না।

পড়তে পারেন: করলা চাষে যে পদ্ধতিতে সার প্রয়োগে অধিক ফলন পাবেন

সাদা মাছি পোকা:

ক্ষতির প্রকৃতি: স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়, ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে।

দমন ব্যবস্থা: পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার। বিষটোপের জন্য থেতলানো ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়ার সাথে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। বিষটোপ ৩-৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়।

পামকিন বিটল:

ক্ষতির প্রকৃতি: পূর্ণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে খায়। কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে, বড় গাছ মেরে ফেলতে পারে।

দমন ব্যবস্থা: আক্রান্ত গাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাতে ধরে মেরে ফেলা। চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন চারা মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখা। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন/কার্বারিন-৮৫ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২-৫ গ্রাম বাসুডিন/ডায়াজিনন ১০ জি মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না।

করলার ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ

লক্ষণঃ এ রোগ হলে গাছে হলুদ ও গাঢ় সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক করা পাতা দেখা দেয়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ
১. রোগমুক্ত বীজ বপন করা
২. সুষম সার ব্যবহার করা
৩. ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা
৪. জাব পোকা ও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক। যেমন: এডমায়ার ১ মি.লি./ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না ।

করলার মাছি পোকা ও পামকিন বিটল পোকা দমন পদ্ধতি সংবাদের লেখাটি লিখেছেন মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার, ডুমুরিয়া, খুলনা। লেখাটি তথ্য কৃষি বাতায়ন থেকে নেওয়া হয়েছে।