সাঈদ সারোয়ার, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাছ চাষির অজ্ঞতা বা অবহেলা বা ভুল লাভজনক মাছ চাষের ক্ষেত্রে অন্তরায়। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মাছ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাছের অনেক চাহিদা থাকার কারণে মাছ চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব। আসুন কার্প জাতীয় মাছের টেকসই চাষ পদ্ধতি (পর্ব-৩) সম্পর্কে জানব।

দুঃখের বিষয় সঠিক নিয়ম কানুন এবং পদ্ধতি জানা না থাকার কারণে কার্পমাছ চাষ করেন এমন বেশির ভাগ চাষি মূলধনও তুলে আনতে পারেন না।

নার্সারী, চারা পুকুর ও কালচার পুকুরের বৈশিষ্ট্য:-

পড়তে পারেন: পুকুরে মাছের ক্ষত রোগ দেখা দিয়েছে, কী করবেন?

রেনু বা ধানি পোনা যে পুকুরে চাষ করা হয় সেটাকে নার্সারী পুকুর বলে।
এই পুকুর ১০ শতক থেকে ২০ শতকের মধ্যে হওয়া ভালো।
পানির গড় গভীরতা ২ ফুট থেকে ৩ ফুটের মধ্যে উঠা নামা করাতে হবে।
আগাছা, ঝোপঝাড় ও কৃষি জমির আশেপাশে নার্সারী পুকুর নির্বাচন করা যাবেনা।
পুকুরের উপরে ও চারপাশে নেটিং এবং গভীর নলকূপ থেকে পানির সেচ দেওয়ার ব্যবস্হা থাকতে হবে।
রেনু হলে প্রতি শতকে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম, আর ধানি পোনা হলে ৮শ থেকে ১ হাজার পোনা নার্সিংয়ে দিতে পারেন।
এই পুকুরে চাষের মেয়াদ কাল রেনু হলে ৪৫ থেকে ৬০ দিন, ধানি পোনা হলে ৩০ থেকে ৪৫ দিন।
পোনার সাইজ ৪/৫ ইঞ্চি (কেজিতে ১৫০/২০০ পিচ) হলে বিক্রি শুরু করতে পারবেন অথবা চারা পুকুরে (চাপের পুকুরে) স্থানান্তর করতে পারবেন।

পড়তে পারেন: কার্প জাতীয় মাছের টেকসই চাষ পদ্ধতি (পর্ব-১)

এই পুকুরে সাধারণ মরটালিটি বাবদ ১০/২০% পোনা মারা যেতে পারে। যে পুকুরে ফিঙ্গার সাইজ (৪/৫ ইঞ্চি) পোনা ৬ থেকে ৮ মাস চাষ করে কালচার পুকুরে চাষে দেওয়ার মত চারা পোনা বা চাপের পোনা উৎপাদন করা হয় সেটাকে চারা পুকুর (চাপের পুকুর) বলে।

এই পুকুর টি ২০ থেকে ৪০ শতকের মধ্যে হওয়া ভালো। পানির গড় গভীরতা ৩ থেকে ৫ ফুটের মধ্যে উঠা নামা করাতে হবে। যেহেতু এই সাইজের পোনা কে হাঁসপোকা ও ব্যঙের আক্রমণের সম্ভাবনা নেই , তাই পুকুর টি যে কোন স্থানে নির্বাচন করতে পারেন।

তবে বিভিন্ন শিকারি পাখি ও সাপ আক্রমণ করার ভয় থেকেই যায়, তাই প্রয়োজনে নেটিং টা করতে হবে। প্রয়োজনে পানির যোজন-বিয়োজন করতে পারবেন এমন ব্যবস্হা রাখতে হবে। এই পুকুর থেকে চাষির চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজের পোনা উৎপাদন করা হয়ে থাকে।

তারমধ্যে উল্লেখ যোগ্য সাইজ হলো ২শ থেকে ৫শ গ্রাম। যদি ২/৩শ গ্রাম সাইজের পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা
থাকে, তাহলে প্রতি শতকে ১৫০ থেকে ২০০ পিচ ৪/৫ ইঞ্চি সাইজের পোনা মজুদ করবেন। আর যদি ৩শ গ্রাম থেকে ৫শ গ্রাম সাইজের পোনা উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা থাকে, তাহলে শতকে ১০০ থেকে ১২০ পিচ ৪/৫ ইঞ্চি সাইজের পোনা মজুদ করুন।
এই পুকুরে সাধারণ মরটালিটি বাবদ ৩/৫% পোনা মারা যেতে পারে।

যে পুকুরে চারা পোনা চাষ করে সাধারণ ভোক্তার কাছে বিক্রির উপযোগী মাছ উৎপাদন করা হয়, সেটাকে কালচার বা মজুদ পুকুর বলা হয়। কার্পমাছ চাষের ক্ষেত্রে যত বড় পুকুর নির্বাচন করা যায় ততই মঙ্গল। এই পুকুরের গড় গভীরতা ৫ থেকে ৮ ফুটের মধ্যে রাখা ভালো। গত পর্বে উল্লেখিত মজুদ পুকুরের গুণাগুণ সম্বলিত যে কোন স্থানে পুকুর টি নির্বাচন করতে পারেন।

 কার্প জাতীয় মাছের টেকসই চাষ পদ্ধতির বিভিন্ন পর্ব জনস্বার্থে প্রচারিত হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ