বাসস: জেলার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামের যুবক তুহিন আলী। ‘বল সুন্দরী’ বরই চাষ করছেন। ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কুল ও পেয়ারা চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কয়েক বছর আগে নিজের জমির সাথে আরও তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে তার ৬ বিঘা জমিতে ফলের বাগান গড়ে তোলেন।

বর্তমানে তার বাগানে ৮৫০টি গাছ বল সুন্দরী ও তিন হাজার পেয়ারার গাছ রয়েছে। আগে নিজের জমিতে তামাকের আবাদ করলেও তামাক ছেড়ে বর্তমানে তিনি একজন সফল বরই চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত লাভ করেছে।

সরজমিনে তার বাগানে দেখা যায়, সোনালী হলুদ আভার বল সুন্দরী কুল দুলছে বাগানে। প্রতিটি গাছে গাছে দুলছে বল সুন্দরী কুল। কুল বাগান থেকে কুল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত তুহিন আলীসহ বাগানে আরও কয়েকজন শ্রমিক। পোকামকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে চারদিকে নেট দিয়ে ঘেরা। এছাড়াও বাগান ঘুরে দেখা গেল পরিদর্শন করতে এসেছে কিছু উৎসুক জনতা। কেউ কেউ আবার মিষ্টি কুল কিনতেও দেখা গেল।

তুহিন আলী বলেন, এখন আমার ৬ বিঘা জমিতে বলসুন্দরী কুল ও পেয়ারা আবাদ করছি। দুই বছর আগে এসব কুল চাষ শুরুর পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাগানের ফল ধরতে শুরু করে। বছর শেষে সকল খরচ বাদ দিয়ে আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়েছিল।

তিনি বলেন, এ বছর আমার বাগানে ভরপুর কুল এসেছে। আমার বাগানে ৮৫০ টি বল সুন্দরী কুল গাছ থেকে ৫শ মণ কুল পাবো বলে আশা রাখছি। ইতিমধ্যেই বরই বিক্রি শুরু হয়েছে। এখান থেকে ৬ লাখ টাকার লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়াও পেয়ারা বাগান থেকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পেয়ারা উত্তোলন করতে পারবো। স্থানীয়রা জানান, তুহিন আলী একসময় ব্যাপক তামাকের চাষ করতো। কিন্তু তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে কুল চাষে সফলতা দেখে এলাকার লোকজন উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই কুল চাষে এগিয়ে আসছেন। অনেকেই তাদের দেখে চাষ শুরু করেছেন। যে কেউ তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন।

বরই বাগানের শ্রমিক ইদ্রিস আলী বলেন, আমি নিয়মিত এ বাগান দেখাশুনা করে থাকি। এজন্য আমাকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিয়ে থাকে তুহিন ভাই। এছাড়াও এ বাগান হওয়ায় এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনেকে এখন বরই বাগানে কাজ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছেন। বাগানে বরই গাছের গোড়া পরিষ্কার, স্প্রে করা, সার দেওয়া, গাছ থেকে বরই পেড়ে বাজারে নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা।

মিরপুর উপজেলার তামাক চাষি কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এ মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের এগারোটি গ্রামে তামাক চাষ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ডাল, তেল মশলা চাষ এবং ফলজ বাগান ও সবজি বাগান গড়ে তুলতে উৎসহি প্রদান, পরামর্শসহ কারিগরি সহায়তাও প্রদান করছি।

কৃষক তুহিন আলী আগে তামাকের আবাদ করতো। আমরা তাকে সহযোগিতার মাধ্যমে এব পরামর্শ দিয়ে ফলের বাগান গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। তার বাগানে পেয়ারা এবং কুল আবাদ করে এখন তিনি এলাকার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের কৃষি বিভাগের পাশাপাশি তার বাগানের কুল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। তুহিন আলীর এ সাফল্যে ইতিমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মানসুরা চামেলী ও শাখাওযাত নামের দুজন কুষ্টিয়ায় বেড়াতে এসে তুহিন আলীর কুল বাগান দেখে অভিভূত। বাগান দেখে তাদের সত্যি মনটা বেশ প্রফুল্ল¬ হয়ে যায়। এ বাগানে এসে গাছের মিষ্টি কুল খেতে খেতে বলছিলো বাগানের সতেজ এবং টাটকা মিষ্টি বরই সত্যি আমাদের ্এ কুষ্টিয়া সফরকে অনন্য মাত্রায় এনে দিয়েছে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈব সার ব্যবহার করে যেন ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারে সেজন্য তাকে প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা দিয়েছি। তুহিন আলীর কুল বাগান আমরো পরিদর্মন করেছি। এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় কুল বাগান তার। বেলে দোঁআশ মাটিতে এ কুলের ভালো চাষ হয়। তার কুল স্বাদের অনন্য। তিনি একজন উদ্যমী কৃষি উদ্যোক্তা।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উন্নত জাতের আপেল কুল, বাউকুল, বল সুন্দরী কুল চাষ হচ্ছে। মিরপুর উপজেলার গৌড়দহ এলাকায় তুহিন আলী এখন অভিজ্ঞ কুল চাষি। তার বল সুন্দরী কুল চাষে সফলতা পেয়েছেন। আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। তাদের দেখে আরও মানুষ এ কাজে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছেন সচেতন মহল।