নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, ‘শুধু সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা নয়, কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে’।

তিনি আরোও বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি এবং করোনা সময়কালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে ৮ লক্ষ মেট্টিক টন ধান, ১.৫ লক্ষ টন আতপ চাল, ১০ লক্ষ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল, এবং ৭৫ হাজার মেট্টিক টন গমসহ ২০ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্টিক টন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ মজ্ঞলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান কর্তন অগ্রগতি এবং করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। আগামী জুন মাসের মধ্যে সারা দেশের বোরো ধান শতভাগ কর্তন সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ অনলাইন ব্রিফিংয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ সংযুক্ত ছিলেন।

মন্ত্রী আরও জানান, খাদ্য ক্রয় কার্যক্রমকে সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ধান বিক্রয়কারী কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা খাদ্য বিভাগের নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কৃষকের ধান বিক্রয়ে যাতে সুবিধা হয় এজন্য ইউনিয়নে পর্যায়ে ২২৩২ টি আর্দ্রতামাপক যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

বর্তমানের কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা এবং তা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা ও বিভিন্ন সময়ের প্রদানকৃত নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার নিমিত্ত যাতে কোন জমি পতিত না থাকে এবং আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট মাঠ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং পারিবারিক সবজি বাগান নামে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে।

কৃষিমন্ত্রী এসময় কৃষকদের বাঁচাতে ৪% সুদে শস্য ও ফসলখাতসহ কৃষিখাতে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার কথা উল্লেখ করেন।

কৃষিমন্ত্রী জানান, হাওরভুক্ত সাত জেলায় (কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শুধু হাওরের এ বছর বোরো আবাদের পরিমাণ ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মোট কর্তন হয়েছে ৪ লক্ষ ৯৬৪ হেক্টর যা হাওরভুক্ত মোট আবাদের শতকরা ৯০.০২ ভাগ। হাওরাঞ্চলে (হাওর ও নন হাওর মিলে) মোট বোরো আবাদের পরিমাণ ছিল ৯ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট কর্তনের পরিমাণ ৬ লক্ষ ১১ হাজার ৮১৩ হেক্টর যা হাওরের জেলাসমুহের মোট আবাদের শতকরা ৬৫.৩৪ ভাগ। অন্যদিকে, সারা দেশে আবাদের পরিমাণ ৪৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর এর মধ্যে কর্তন হয়েছে ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬১১ হেক্টর যা মোট আবাদের শতকরা ২৫ ভাগ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে হাওরভুক্ত জেলাসমূহে ধান কর্তনের জন্য প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ৫০০জন কৃষি শ্রমিক নিয়োজিত আছে। সফলভাবে নিরাপদে হাওর অঞ্চলের বোরা ধান দ্রুত কর্তনের জন্য উত্তরাঞ্চলসহ দেশের প্রায় ৪টি কৃষি অঞ্চল হতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এবং সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রায় ৩৮ হাজার জন কৃষি শ্রমিককে হাওরে প্রেরণ করা হয়েছে।

আরোও পড়ুন:হাওরের ৯০ ভাগ ও সারাদেশের ২৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী

ভাইরাসের প্রভাব এড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুয়ায়ী কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে জরুরী সহায়তা বাবদ প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৮০৩ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৫১৯টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০৮টি রিপারসহ সর্বমোট ১৩২২ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯০৮ টি রিপার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এসব কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে হাওর অঞ্চলে ৩৭০ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৫৫টি রিপার ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে।

চলতি আউশ মৌসুমে আউশ আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা থেকে মোট উৎপাদন হবে ৩৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮০০ মেট্টিক টন চাল। ইতোমধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন ফসলের (আঊশ, পাট, তিল ও গ্রীষ্ম কালীন সবজী) জন্য ৩ লক্ষ ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৩৪ জন কৃষকের মাঝে মাঝে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনা অর্থের সহায়তায় ৪১০.৮৬ মেট্টিক টন আউশ ধানের বীজ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।ফসলের জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণকরণ কার্যক্রমের আওতায় রাজস্ব অর্থায়নে ৭৫ কোটি টাকার কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলমান আছে বলেও তিনি জানান।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সকলের সহযোগিতা বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের পক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি ও কৃষকের পাশে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনার দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের খাদ্য উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বৃদ্ধি করে ২০৩০ সালের অভীষ্ট উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হব।