নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রথমবারের মতো ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’-২০২০ সম্মাননা গ্রহণ করলেন ১৩ জন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন নাটোরের সুপরিচিত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো: সেলিম রেজা। জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার (২৭ জুলাই ২০২২) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা প্রদান করা হয়। কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ সম্মাননা প্রদান করেন।

কথা হয় এই কৃষি উদ্যোক্তার সঙ্গে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “আমি মূলত ২১ বছর ধরে আধুনিক যুগোপযোগী নিরাপদ, নতুন নতুন কৃষিতে বিভিন্ন ফল, সব্জি, প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করায় দেশে – বিদেশে সর্বাধিক পুরস্কার এবং সম্মাননা অর্জন করেছি। আমার খামারে দেশি, বিদেশি এবং বিলুপ্ত প্রায় ১৫০ রকমের ফল নিয়ে কাজ করছি। নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, বেকারত্ব দূরীকরণ, নিরাপদ খাদ্য ও প্রযুক্তি উৎভাবন করে সফলতা পেয়েছি যা দেশের কৃষিতে বর্তমান খুবই দরকার।”

পড়তে পারেন: এআইপি সম্মাননা গ্রহণ করলেন ১৩ জন 

জানা যায়, নাটোরের স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত সফল উদ্যোক্তা ও গবেষক সেলিম রেজা। নাটোরের সদর উপজেলার আহমেদপুর এলাকায় তাঁর রয়েছে “দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারি”। সেলিম রেজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে সদর উপজেলার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি নিতান্তই সখের বসে গত ২০০০ সালে নিজ এলাকায় পৈত্রিক সামান্য জমি নিয়ে কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

তিনি প্রথমে ২০০২ সালে ভেষজ শতমূল, মিছরি দানা, ঘৃতকুমারী ও শিমুলে চাষ শুরু করলেও ২০০৪ সালে দেশে প্রথম থাই ও আপেল কুল চাষ এবং ২০০৬ সালে দেশে প্রথম বারমাসী থাই পেয়ারার চাষ করে সফল হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি দেশের জন্য সারা বছর ব্যাপী বিভিন্ন দেশী-বিদেশী বিলুপ্ত ফলসহ হরেক রকম ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। দেশের লাখো মানুষের জন্য সেলিম এখন দৃষ্টান্ত।

সেলিম রেজা কম্বোডিয়াতে আফসা, শ্রীলংকায় আইএমএফএমএপি, ভারতের কুচবিহারে নিরাপদ খাদ্যের ওপরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, রাষ্ট্রপতির হাত থেকে কেআইবি কৃষি পদক, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, জাতীয় বৃক্ষরোপণ আন্দোলন ও ফলদ বৃক্ষমেলা পুরস্কার, জাতীয় সবজী মেলা পুরস্কার এবং দুইবার জাতীয় সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার লাভ করেন।

সেলিম রেজা প্রথমে আহাম্মদপুরে নিজেদের সাড়ে চার বিঘা জমি নিয়ে চাষাবাদ শুরু করলেও একের পর এক সফলতার পর তিনি নাটোরের বিভিন্ন জায়গায় অন্যের জমি লীজ নেয়া শুরু করেন। এখন তিনি প্রায় পৌনে দুইশ’ বিঘা জমি তাঁর চাষের আওতায় এনেছেন।

এসব জমিতে কৃষি উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বিদেশী সুস্বাদু ড্রাগন ফল, কলকাতা থেকে আনা কাঁটা বিহীন গোলাপ ও মেরুন রংয়ের গ্লাডিউলাস ফুল, বিদেশী রেড লেডী জাতের পেঁপে, মাটির আদ্রতা রক্ষায় দেশে প্রথম তাইওয়ান থেকে আনা মাল্চিং পেপার ব্যবহারে বিদেশী চেরী ফল, টমেটো, বিভিন্ন জাতের বাঁধা কপি ও স্ট্রবেরী সহ ফল ফুল ও সবজি চাষ করছেন।

এখন তিনি পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের বারমাসী লেবু, লেট ভ্যারাইটি আম, (গৌরমতি, যাদুভোগ, বারী-৪, ও বান্দিগোড়), নিলুদ্দিন (বারি-১১), ব্রুনাই কিং, বারমাসী বেদানা, শরিফা, বাতাবী লেবু, বারমাসী কদবেল, খাটো জাতের অল্প সময়ে ফলনশীল (২ থেকে ৩ বছর) কেরালা হাইব্রিড নারিকেল, ভিয়েতনাম থেকে আনা সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও সিয়াম ব্লু কোকোনাট চাষ শুরু করে সফলতা পেয়েছেন।

এছাড়াও সেলিম রেজা ফল উৎপাদনে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প ব্যবহার উপযোগী ও সাশ্রয়ী ব্যাগ ব্যবহারও শুরু করে দেশে অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের বিলুপ্ত প্রায় ও পুষ্টি সমৃদ্ধ বিষমুক্ত ফলগুলো মানুষ জাতে বার মাস খেতে পায় এটাই তাঁর পরিকল্পনা। একই সাথে তাঁর সাফল্যে দেশের লাখ লাখ মানুষের বেকারত্ব দুর হতে পারে বলেও তিনি আশা করেন।

অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এআইপি পুরস্কার প্রদান কৃষি বান্ধন সরকারের এক মহৎ উদ্দ্যোগ। তবুও ১৩ কোটি কৃষকের দেশে সব পেশার মানুষ মহান সংসদে থাকলেও কৃষির ব্যাপক অনিয়ম বিষয়ে আমাদের বিভিন্নভাবে বিপদে পড়তে হয়। এ জন্য আমি মনে করি মহান সংসদে কিছু হলেও কৃষকদের মনোনয়ন-সংসদ সদস্য পদ থাকা উচিত।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ