নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের কৃষির টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি রুপান্তর, কৃষি বহুমুখীকরণ, বাজারজাতকরণ এবং ভ্যালু অ্যাড ও ভ্যালু চেইন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড.মো: আব্দুর রাজ্জাক।

আজ বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) আয়োজিত  ‘Agricultural Transformation in Bangladesh: Evidence on Biotechnology and Nutrition-Sensitive Agriculture’ শীর্ষক Policy Workshop তিনি এ মন্তব্য করেন।

দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস হচ্ছে কৃষি উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি উন্নয়নে যুগোপযোগি নীতিমালা প্রণয়ন হালনাগাত করেছে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষি;খোড় পোষের কৃষি নয়। এমতবস্থায় জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বৈচিত্রপূর্ণ খাদ্যের উৎপাদন জরুরী। হালনাগাদ কৃষি নীতিটিতে বায়োটেকনোলজিতে গবেষণা ও উন্নয়নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়নেরও গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি আজ শুধু কৃষকের একার চিন্তার বিষয় নয়। কৃষির প্রশ্নে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারক যেমন কাজ করছেন, তেমনি সক্রিয় অবদান রাখছে বেসরকারি খাতও।

বিজ্ঞান ও গবেষণা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চিন্তা। বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য কৃষি গবেষনার কোনো বিকল্প নেই।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আধুনিক জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকার জিএমওসহ কৃষি রুপান্তর,হাইব্রিড জাত নিয়ে এসেছে।

তিনি জানান, দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। এর ফলে কৃষক আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে, কৃষিকাজে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে পুষ্টিকর খাদ্য বাজারে থেকে ক্রয়ের সামর্থ নেই, এ জন্য কৃষিজ পণ্যের বাজারজাত অপরিহার্য। অনেক ফসল রযেছে যেমন আমাদের চাহিদার চেয়ে ৩০ লাখ টন আলু বেশী উৎপন্ন হয় যার মাত্র ১ লাখ টন রপ্তানি করা যাচ্ছে।

বাকি উদ্বৃত্তাংশ উৎপাদন খরচ উঠাতে পাড়ছেনা কৃষক। মাথাপছিু আয় বৃদ্ধিতে কৃষির বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে উদ্ভাবিত বিটি বেগুন কৃষক ভোক্তা সবাই গ্রহণ করেছে উৎপাদন ভালো এবং বেশ লাভজনক। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত নিয়ে বিরোধীতা করছে।

তারা কোনো তথ্য প্রমান ছাড়া কথা বলছে। এসব ফসলে কোন ক্ষতিকর কিছু নেই। আমাদের কৃষকরা এসব উন্নত জাতের স্বত্ব হারাবে যে কথা বলা হচ্ছে তাও ঠিক নয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা খাদ্য চাহিদা মিটানো ও ভবিষৎ খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় নতুন নতুন উন্নত জাত উদ্ভবান করতে হবে।

নতুন জাত যেন পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর না হয় সেই দিকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা আরও ভালো ভালো টেকনোলজি সম্পৃক্ত করবো, সমালোচনা থাকবে এরই মধ্যে কাজ করে যেতে হবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের পথে।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভেজাল রোধে আমাদের আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল। খাদ্য ভেজাল রোধে আর কোন ছাড় দেয়া হবে না্।

ভেজাল রোধে ঢাকায় কেন্দ্রীয় ভাবে একটি ল্যাব ও বিভাগীয় শহরের একটি করে ল্যাব স্থাপন করা হবে যাতে করে দ্রুততার সাথে ভেজার সনাক্ত করা যায়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো: আব্দুর রৌফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবুল কালাম আযাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিএই) মীর নুরুল ইসলাম, মিসেস  জিনাহ সালাহী, ভারপ্রাপ্ত মিশন ডিরেক্টর, ইউএসএআইডি এবং আখতার আহমেদ, আইএফপিআরআইয়ের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিটিভ।

কৃষিমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।