ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: একেবারে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উপজেলায় কৃষি সেবার জন্য আর যেতে হবে না। পোহাতে হবে না দুর্ভোগ। এখন থেকে হাতের নাগালে কৃষি সেবা পাবেন কৃষক।

কৃষি উন্নয়ন আরেক ধাপ এগিয়ে, কৃষি সেবা এখন গ্রামে। এতে কৃষকের সময় ও আর্থিক উভয় সাশ্রয় হবে। স্বচ্ছলতা আসবে কৃষকের ঘরে। এখন থেকে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ এ  মিলবে সব সেবা।

সরকার  কৃষি কাজে কারিগরী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় স্থাপন করেছে এ ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’।

সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর (পাইলট) প্রকল্পে’র মাধ্যমে দেশের ২১টি জেলার ২৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০টি ইউনিয়নে আরো ২০টি ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ নির্মান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা যেহেতু মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সম্প্রসারণ সেবা দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে তাদের দাপ্তরিক সেবা প্রদান ও স্বপরিবারে বসবাসের কোনো সুযোগ না থাকায় কৃষকভাইয়েরা প্রয়োজনের সময় অনেকক্ষেত্রেই উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সেবা পেতে কষ্ট করতে হয়।

কেন্দ্রগুলো চালু হলে কৃষকের আধুনিক কৃষি তথ্য সেবা সহজলভ্য হবে। ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ ইউনিয়নে ‘কৃষি সেবার ওয়ান স্টপ সেন্টার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। পাল্টে যাবে গ্রামীণ কৃষির চিত্র। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি মহোদয়ের নির্দেশিত নকশা মোতাবেক ভবনগুলো আধুনিক ও উন্নতমানের করে নির্মান করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষিমন্ত্রীর এ দূরদর্শী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ অধিক জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা বিধান সম্ভব হবে।

রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে কিভাবে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করা যাবে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো যাবে, এসকল পরামর্শ ছাড়াও এই সেবা কেন্দ্র থেকে কৃষকরা পাবেন কৃষি বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ।

শুধু তাই নয়, কৃষক সেবা কেন্দ্রেই পাবেন সরকারি প্রণোদনায় দেয়া সার ও উন্নত মানের বীজ। সেবা কেন্দ্রগুলোতে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষনিক অবস্থানের জন্য পারিবারিক আবাসন সুবিধা রাখা হয়েছে।

যাতে করে তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে কৃষির নানা বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। তিন তলা বিশিষ্ট সুসজ্জিত এ ভবনের নিচ তলায় রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ কেন্দ্র।

দ্বিতীয় তলায় ৩জন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণের অফিস ও সিনিয়র উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার জন্য সকল সুবিধাসহ পারিবারিক সরকারি বাসস্থান। তৃতীয় তলায় রয়েছে ২জন উপসহকারি কর্মকর্তার পারিবারিক সরকারি বাসস্থান।

ভবনটিও সাজানো হয়েছে অত্যাধুনিকভাবে। ভবনের সকল ফ্লোরে টাইলস্, বাসাগুলোতে ডাইনিং, ড্রইং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রয়েছে সৌর প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের সুবিধা, ফসল সংগ্রহোত্তর নিরাপদ বাজারজাতকরণ কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং কৃষি তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণের জন্য কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ইন্টারনেট, ফটোকপিয়ার, স্ক্যানারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ইউনিয়নের কৃষির ডাটাবেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ও সংলগ্ন খালি জমিতে আধুনিক ও উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তির এবং স্থানীয় জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের জন্য মাতৃবাগান স্থাপন এবং মিনি নার্সারী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাতৃবাগান হতে বছরব্যাপি চারা বা কলম উৎপাদন ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণের সুবিধা রাখা হয়েছে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নে স্থাপিত ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র নিয়ে এলাকার কৃষকদের আগ্রহের শেষ নেই। বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক জানান, আগে আমরা বাপ দাদার আমলের চাষাবাদ করতাম। ফলন কম পাইতাম।

চাষাবাদ শুরুর সময় পরামর্শ নিতে বা সার বীজ নিতে কৃষি অফিসে যেতে অনেক সময় লাগতো। কিছুদিনের মধ্যে আমরা ঘরের পাশেই কৃষি সেবা ও প্রশিক্ষণ পাবো। আমরা প্রশিক্ষিত হয়ে বেশি বেশি করে ফসল উৎপাদন করতে পারবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বর্তমানে দেশের ২৪টি ইউনিয়নে পাইলটিং আকারে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হচ্ছে।

পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হবে। উৎপাদনের বিভিন্ন তথ্য কৃষকদের আগেই জানাতে পারলে কৃষক সহজে তার মাঠের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবে। এছাড়াও  জলবায়ু পরিবর্তন,  কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, শস্য বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি কৃষকদের ঘরে পৌঁছে দিতে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।