কৃষি যান্ত্রিকীকরণে চাহিদা থাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাঠে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে চাহিদা থাকা সত্বেও পর্যাপ্ত সহায়তা মিলছে না। দিনের পর দিন কৃষি শ্রমিক আর কৃষি জমি যখন উভয় কমছে, বাড়ছে মানুষ। আর এই বাড়তি মানুষের খাদ্য উৎপাদনে শ্রম ও সময় সাশ্রয়ে গুরুত্ব বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এই কৃষিযন্ত্রের সরবরাহ স্থবির হয়ে পরেছে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তান না পাওয়ায়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখন প্রয়োজন কৃষি যন্ত্রগুলোকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। আর এজন্যে দরকার ভর্তূকি সহায়তা। কিন্তু এই ভূর্তিকির সহায়তাই পর্যাপ্তা মিলছে না।

এ সহায়তার জন্যে অর্থমন্ত্রনালয়ের কাছে ৪০০ কোটি টাকা চেয়েছিলো কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু অনুমোদন হয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। গত নয়মাস ধরে বন্ধ থাকা ভর্তুকি কার্যক্রম এ পরিমান অর্থ নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে কাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

কৃষি মন্ত্রনালয় বলছে, ৪০০ কোটি টাকা চেয়ে একটি চিঠি অর্থসচিব বরাবর পাঠান কৃষিসচিব। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। নীতিমালা না থাকায় পরে কৃষি মন্ত্রণালয় খসড়া নীতিমালা সংযুক্ত করে অর্থ ও মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠান কৃষি সচিব। সেটি মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করলে পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রনালয় ১০০ কোটি টাকার কিছু অর্থ ছাড় করে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, কৃষি ব্যবস্থাকে যান্ত্রিকীকরন করতে চায় সরকার। অর্থমন্ত্রনালয় থেকে আলাদা ৪০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধের আগ থেকেই মাঠ পর্যায়ে চাহিদা নিরুপর শুরু করেছি। চুড়ান্ত হিসেব স্বল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে যাবো। কিন্তু মন্ত্রনালয় থেকে মাত্র ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি অনুমতি পেয়েছি।

তিনি বলেন, তবে বরাদ্দ যা পেয়েছি তার চেয়ে হয়তো আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। মাঠ পর্যায়ে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে সেগুলো মেটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কেননা বরাদ্দকৃত অর্থ আমরা খরচ করতে পারলে আরো বেশি বরাদ্দ পাবো। ফলে ভর্তূকি সহায়তা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই।

এ বিষয়ে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরনের ব্যবস্থাটি সচল রাখার। বিভিন্ন মেয়াদে প্রকল্পের মাধ্যমে যে সহায়তা দেওয়া হতো সেটি গত জুনে শেষ হয়েছে। কার্যত তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে যান্ত্রিকীকরনে ভর্তূকি কার্যক্রম।

বেসরকারি খাতের এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, এরপর গত কয়েক মাস ধরেই সরকারের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা কৃষির যান্ত্রিকীরনরের বিশাল সহায়তা দেওয়া হবে বলে ঘোষনা দিচ্ছেন। এতে কৃষক আবারো আগ্রহী হচ্ছেন যন্ত্র কেনায়। তারা অপেক্ষা করছেন কবে থেকে এ সহায়তা দেওয়া হবে। ভর্তূকি সহায়তার আশায় কৃষি যন্ত্র কেনা শুরু করছেন না। মাঠ পর্যায়ে ব্যবপক চাহিদা রয়েছে কৃষি যন্ত্রের। কিন্তু আমরা বিক্রি বাড়াতে পারছি না।

সূত্র জানায়, ট্রাক্টর ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার এবং পাওয়ার টিলারের ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কর্তনের প্রায় ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরন করা সম্ভব হচ্ছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যবহার হয় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এই যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে ১ লাখের বেশি। কিন্তু দেশে ব্যবহার হচ্ছে ১ হাজারের কম। আর ধান বীজ বোনার জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের প্রয়োজন ২ লাখ।

অথচ দেশে এ যন্ত্রটির ব্যবহার হচ্ছে এক হাজারেরও কম। শুধু ধান কাটার যন্ত্র রিপারের চাহিদা এক লাখ। অথচ দেশে এ যন্ত্র রয়েছে ৫ হাজার। আর ধান বোনার জন্য পিটিও সিডার আছে মাত্র আড়াই হাজার। দেশে এই যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ। একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকার মধ্যে। বপন ও কর্তন যন্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের জন্য ক্রয় কষ্টসাধ্য।

সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিলে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটি গত নয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় বিক্রিতে এক ধরনের ভাটা পড়েছে। কিছু মাঝারি ও হালকা কৃষি যন্ত্রের বিক্রি হলেও বড় কৃষি যন্ত্র বিক্রি প্রায় শূণ্যের কোঠায় পৌছেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমিরেটাস ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল বলেন, আধুনিক চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ট্রাক্টর ও কম্বাইন্ড হারভেস্টরের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা না থাকা ও অর্থসহায়তার অভাবে বেশি দামের এসব যন্ত্রপাতি কিনতে পারছেন না কৃষক। সেখানে সরকারের ভর্তূকি সহায়তা কার্যকর করার পাশাপাশি অর্থায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।

কেননা এখনও ব্যাংকগুলো সরাসরি কৃষককে ঋণ না দিয়ে কোম্পানিগুলোকে ঋণ প্রদান করছে। সেই ঋণ দিয়েই কৃষক মেশিন ক্রয় করছে। এছাড়া যন্ত্র আমদানি শুল্ক ব্যবস্থা কৃষকের সামর্থের মধ্যে আনার জন্য ভর্তূকি সহায়তা বাড়াতে হবে।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে চাহিদা থাকা সত্বেও পর্যাপ্ত সহায়তা মিলছে না এটা দেশের কৃষির জন্যে ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে মত প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণে উৎপাদন খরচ কমছে, বাড়ছে ফসলের নিবিড়তা