নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের শাহিদা বেগম নামে এক চাষির পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন খামার পরিদর্শন করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

আজ বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল ২২) সকালে এ খামার পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।

শাহিদা বেগম পেঁয়াজবীজ চাষি হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে তিনি অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২১ সালে পেঁয়াজবীজ বিক্রি করে ৭৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন বলে জানান শাহিদা বেগম।

সাহিদা বেগমের বাড়ি ফরিদপুর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামে। স্বামী মো. বক্তার হোসেন খান একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের কর্মকর্তা। এই দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মেরিনা আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর পর। ছোট মেয়ে মার্জিয়া আক্তার পড়ছে নবম শ্রেণিতে।

স্ত্রী সাহিদার উদ্যোগে সব সময় পাশে থাকেন স্বামী বক্তার। তাই তো বক্তার হোসেন খান বলছিলেন, ‘আমি তো ৯টা-৫টা অফিসেই কাটাই। পরিবারসহ মাঠের সব কাজ সাহিদাই সামলায়। তবে সুযোগ পেলেই তার কাজে সহযোগিতা করি।’

বক্তার হোসেন কৃষক পরিবারের সন্তান। ১৯৮৭ সালে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এসেই গৃহস্থালির কাজে হাতেখড়ি সাহিদার। ধানমাড়াই থেকে ঢেঁকিতে চাল ছাঁটা—সবই করতে হতো। সাহিদা জানালেন, প্রথমে কষ্ট ও বিরক্তি লাগত। তবে শাশুড়ি জোহরা বেগমকে নিরন্তর গৃহস্থালির কাজ দেখে সাহিদাও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। একসময় কৃষিকাজের প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগ জন্মায়।

কৃষক পরিবারটি একসময় ধান, পাট, গম, ছোলা, প্রভৃতি শস্যই চাষাবাদ করত। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে পেঁয়াজের বীজ চাষ। সাহিদা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশের একজনকে পেঁয়াজবীজ চাষ করতে দেখে আমিও আগ্রহী হই।’

কোটিপতি চাষি শাহিদার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন খামারে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। এসব বীজ ব্যবহার করে পেঁয়াজ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এক বছরে আমরা সাত লক্ষ টন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়িয়েছি। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই আমরা পেঁয়াজবীজ ও পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো।

পেঁয়াজবীজ চাষিদের জন্য ঋণের ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে বলে এসময় জানান মন্ত্রী।

কৃষকদেরকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কৃষকেরা এতো ঝুঁকি নিয়ে, পরিশ্রম করে পেঁয়াজ চাষ করে, তাদের স্বার্থকে দেখতে হবে। আমরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছি, পেঁয়াজের দাম বেশি কমে গেলে আমদানি বন্ধ করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের মৌসুমে দাম কম থাকে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলে একটু দাম বাড়ে, তাতে ভোক্তাদের কষ্ট বাড়ে ও সমালোচনা শুরু হয়। এটি সরকারের জন্য উভয়সংকট। সেজন্য, আমরা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কিন্তু সমস্যা হলো পেঁয়াজ খুবই পচনশীল। দেশে এখনও পেঁয়াজের পচনরোধে কোন প্রযুক্তি নেই ও সংরক্ষণের জন্য কোন কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করা যায় নি। সেজন্য, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ সম্প্রসারণ ও পেঁয়াজ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

পরিদর্শনকালে কৃষিসচিব মো: সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো: শাহজাহান কবীর, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক হযরত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ