নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ৬ দিন বাকী। তাই কোরবানির পশু কেনাবেচায় অনলাইন ও প্রচলিত পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটি হাটেও গরু-মহিষের আমদানি চোখে পড়ার মতো ছিল। এই হাটে গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) গরু বেচাকেনা বেশ ভালো হলেও ক্রেতা শুন্য দেখা গেছে মহিষের হাট। অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে মহিষ।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের পরিচালক উত্তম কুমার দাস এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৬০টি। ২৫ হাজার ২৬১ মহিষ, ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩২ ছাগল এবং ১৪ লাখ ৪০ ভেড়া। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে। এরইমধ্যে মহিষের তথ্য মোট আপলোড হয়েছে ৩ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৭৬ টি। অনলাইনে বিক্রি ২৯ হাজার ৩শ টি মহিষ। গতকাল বুধবার অনলাইনে আপলোড হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৮৯টি। আর বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১৫০টি মহিষ। গতবারের তুলনায় এবার অনলাইনে সাড়া পেলেও মানুষ সরাসরি হাটে গিয়ে পশু কেনা পছন্দ করেন। লকডাউনে গতবছরের তুলনায় দামও কম।

মহিষ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গরুর বাজারে ক্রেতা থাকলেও মহিষের হাটে ক্রেতা নাই। দু’একজন আসছে মাঝে মাঝে তবে, দাম বলতেই চায়না। কেউ কেউ এমন দাম বলছে মনে হচ্ছে তারা মহিষ নিতে আসেনি। ১২ টা মহিষ নিয়ে এসেছি সকালে এখনো একটাও বিক্রি করতে পারিনি। কোনো ক্রেতা আসেনি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে মহিষের দাম একটু বেশি চাওা হচ্ছে ঠিক কিন্তু ক্রেতা আসেনা। দাম বেশি চাওয়ার কারণ হলো সব কিছুরির দাম অনেক। আর মহিষে তুলনামূলক খাই বেশি।

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ঈদের আগে সাপ্তাহিক হাট হিসেবে আমদানি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু হাটে বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনো সেইভাবে আসেনি। করোনার কারণে বাইরে থেকে ব্যাপারীরাও আসছেন না। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে গরু কিনছেন। গত রোববার ও বুধবার দুই হাট মিলিয়ে চার হাজারের মতো গরু-মহিষ কেনাবেচা হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় মাইকিং করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। এখানে পুলিশ সদস্যরা আছেন তারাও সতর্ক করছেন। সবমিলিয়ে তারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সচেষ্ট আছেন।

ক্রেতা মেশবাহুল হেক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাজারে মহিষের দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশি। মাঝারি সাইজের একটি মহিষের দাম বলছে দেড় লাখ টাকার উপরে চাচ্ছে। যা স্বাধ্যের বাইরে। এখনো কিনতে পারিনি। অন্য বছর আসার পর পর কেনা হয়ে যায়। আর এইবার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা হয়ে গেলো একটাও কিনতে পারিনি। আমরা প্রত্যেকবার এই মহিষের কোরবানি দিয়ে থাকি। কারণ মহিষের মাংসে চর্বি কম থাকে। আর প্রেসারও বাড়েনা। সেই দিক থেকে সুস্বাদুও বটে। আমাদের এলাকায় বেশি মানুষ মহিষ কোরবানি দিয়ে থাকে।

মহিষ ব্যবসায়ী রনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এ বছর ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান গুনতে হবে। কোরবানী উপলক্ষে এখন পর্যন্ত একটি মহিষ বিক্রি করেছি। তাতে কোন লাভ হয়নি। এখনো ১৯ টা মহিষ নিয়ে বসে আছি। কিভাবে বিক্রি করবো এ নিয়ে বড় দুচিন্তায় আছি। করোনার কারনে বাজারে প্রায় ক্রেতা শুন্য।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও মেট্রা অঞ্চল মিলিয়ে মোট কোরবানির জন্য প্রস্তত ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০৭ টি গবাদি পশু।

এদিকে এই মহিষ নিয়ে বিপাকে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। তবে, শেষ সময়ে ভালো লাভের আশায় খামারিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। খুব যত্ন সহকারে দেখভাল করছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কোরবানি কম দেয়া ও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশী থাকায় বাজারে মহিষের দাম অনেক কমে গেছে। এছাড়া বাজারে মহিষ কম সংখ্যাক লোক আছেন যারা মহিষ কোরবানি দেয়ে থাকেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা: ইসমাইল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করছেন। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। যদি আমদানি বন্ধ করা যায় তবে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান সে জন্য রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নজরদারি দিতে হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ